রায়পুরা উপজেলা

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ৬:১৯ এএম

রায়পুরা উপজেলা: নরসিংদীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ

বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার অন্তর্গত রায়পুরা উপজেলা ঢাকা বিভাগের অধীনে অবস্থিত। ২৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলাটি নরসিংদী জেলার পূর্বে অবস্থিত এবং প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরে বেলাবো ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব, দক্ষিণে নরসিংদী সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও নবীনগর, এবং পশ্চিমে শিবপুর ও নরসিংদী সদর উপজেলা রায়পুরার সীমান্তবর্তী। মেঘনা, রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ ও কাঁকন নদী এই উপজেলাকে বেষ্টিত করে আছে। ঢাকা থেকে ৭৯ কিমি এবং নরসিংদী সদর থেকে ৩২ কিমি পূর্বে অবস্থিত এই উপজেলার আয়তন ৩১২.৫০ বর্গ কিলোমিটার, যার ৪৩.৭৭ বর্গ কিলোমিটার জলাশয়।

ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত:

ব্রিটিশ আমলে লর্ড কর্নওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় এ অঞ্চল ময়মনসিংহ মুক্তাগাছা জমিদারির অধীনে ছিল। রায় উপাধিধারী অমাত্যরা উক্ত জমিদারের কাছ থেকে জমি পেয়ে এখানে বসতি স্থাপন করেন। প্রকাশচন্দ্র রায়, পূর্ণচন্দ্র রায়, মহিমচন্দ্র রায়, ঈশ্বরচন্দ্র রায় প্রমুখের নামানুসারে এলাকার নাম হয় 'রায়নন্দলালপুর', যা পরে রায়পুরা নামে পরিচিত হয়। পূর্বে এলাকাটি 'কালীদহসাগরেরচর' নামে পরিচিত ছিল। পাকিস্তান আমলেও এটি ময়মনসিংহ কালেক্টরেটের অধীনে ছিল। রায়পুরাকে মধুপুর গড় ভূমি, ব্রহ্মপুত্র পলল ভূমি এবং মেঘনা পলল ভূমি - এই তিনটি ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, জমিদারি প্রথা ও নীল চাষের বিরুদ্ধে জনসাধারণের প্রতিবাদে রায়পুরার তরুণ বিপ্লবীরাও অংশ নেন। সুন্দর আলী গান্ধী, হাতেম আলী খান, সতীশ পাকরাশী, বিজয় চ্যাটার্জী, অনন্ত দাস, মধু ব্যানার্জী, আফতাব উদ্দিন খোন্দকার প্রমুখ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রায়পুরার রমানন্দ সূত্রধর, সৃষ্টিধর খলিফা, ডাঃ রমেন্দ্র নারায়ণ সাহা প্রমুখ উল্লেখযোগ্য বিপ্লবী। তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের স্বামী রমেণ মিত্রও এখানে আত্মগোপন করেছিলেন।

১৯৪১ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রায়পুরার ৬১টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক ও শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী দাঙ্গা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৪ সালে গরুর বাজারে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা প্রস্তাবের ঘোষণা দেন এবং পরবর্তীতে একই স্থানে মতিয়া চৌধুরী ভাষণ দেন। ১৯৬৬ সালে শিবপুরে পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক গণপরিষদের নির্বাচনে রায়পুরা থেকে রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু নির্বাচিত হন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান:

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রায়পুরা থানা পাকবাহিনীর দখলে ছিল। আফতাব উদ্দিন ভুঁইয়া, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু ও গয়েশ আলী মাস্টার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কর্নেল নূর মোহাম্মদ জামান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের জন্মস্থানও রায়পুরা। মুক্তিযোদ্ধারা হাঁটুভাঙ্গা, আমিরগঞ্জ, বাদুয়ারচর রেল সেতু ধ্বংস করে পাকবাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত করে। ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ রায়পুরা পাক হানাদারমুক্ত হয়। মোট ১৪৩৮ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতি:

স্বাধীনতা পরবর্তী রায়পুরার রাজনীতিতে বাম ও ডানপন্থী দলসমূহের পাশাপাশি জামায়াত-ই-ইসলামী, নেজাম-ই-ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোট উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ফজলুল হক খোন্দকার, শামছুল হক, আফতাব উদ্দিন ভুঁইয়া, কাজী আক্তার উদ্দিন, আসাদুল হক খসরু, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু প্রমুখ রাজনৈতিক নেতা রায়পুরার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

অর্থনীতি ও জনসংখ্যা:

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী রায়পুরার জনসংখ্যা ৪,১৩,৭৬৫। শিক্ষার হার ৩৭%। অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের সাথে জড়িত। ব্র্যাক, আশা, গ্রামীণ ব্যাংক প্রমুখ এনজিও এখানে কার্যক্রম পরিচালনা করে।

অন্যান্য তথ্য:

আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য আমরা আপনাকে পরবর্তীতে আপডেট করবো।

মূল তথ্যাবলী:

  • রায়পুরা উপজেলা নরসিংদী জেলার অন্তর্গত।
  • ২৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত।
  • মেঘনা, রহ্মপুত্রসহ নদ-নদীবেষ্টিত।
  • ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ।
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।