জাতিসংঘ: বিশ্বশান্তির অগ্রদূত
জাতিসংঘ, বা রাষ্ট্রপুঞ্জ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি, নিরাপত্তা ও সহযোগিতার এক অনন্য প্রতীক। ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর ৫১টি রাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগে এর সূচনা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বিশ্বকে রক্ষা করার এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের সংঘাত প্রতিরোধের লক্ষ্যে এ সংস্থাটি গঠিত হয়। জাতিসংঘের সদর দপ্তর নিউইয়র্ক শহরে অবস্থিত, যদিও জেনেভা, নাইরোবি, ভিয়েনা ও হেগে এর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় রয়েছে।
জাতিসংঘের উদ্দেশ্য:
জাতিসংঘের প্রধান লক্ষ্য হলো বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা। এছাড়াও, জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন জাতীয় কর্মকাণ্ডের সমন্বয় সাধন এর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ। জাতিসংঘের অধীনে অনেকগুলো বিশেষায়িত সংস্থা কাজ করে, যেমন- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), ইউনেস্কো (UNESCO), ইউনিসেফ (UNICEF) ইত্যাদি।
সংগঠন কাঠামো:
জাতিসংঘের প্রধান অঙ্গগুলো হলো: সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, সচিবালয়, অছি পরিষদ এবং আন্তর্জাতিক আদালত। নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্য (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন) ভেটো ক্ষমতা রাখে। সাধারণ পরিষদের সকল সদস্য রাষ্ট্রের ভোটাধিকার রয়েছে।
বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ:
বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্য হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতিসংঘ বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং শরণার্থীদের সহায়তা করে। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, বিশেষ করে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
জাতিসংঘের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ:
জাতিসংঘ বিশ্বে অনেক উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে, যেমন- দুর্যোগ মোকাবেলা, মানবাধিকার রক্ষা, উন্নয়ন সহায়তা ইত্যাদি। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিলতা ও সদস্য রাষ্ট্রের স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে জাতিসংঘের কার্যক্রম অনেক সময় বাধাগ্রস্ত হয়।
উপসংহার:
জাতিসংঘ বিশ্বশান্তি ও সহযোগিতার এক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। এর কার্যক্রমের সফলতা নির্ভর করে সদস্য রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর। বিশ্বের সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে জাতিসংঘকে আরও কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।