মুহুরী নদী: বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদীর কাহিনী
মুহুরী নদী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তঃসীমান্ত নদী। এই নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের লুশাই পাহাড়। পাহাড়ি অঞ্চল ধরে প্রবাহিত হয়ে ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার নিকটবর্তী নীজকালিকাপুর ও মাঝিরখালী গ্রামের কাছে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রায় ৬২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীর গড় প্রস্থ ৭১ মিটার, এবং নদীর প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ১৬ হিসেবে মুহুরী নদী পরিচিত।
মুহুরী নদী ত্রিপুরা-নোয়াখালী সেক্টরে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত হিসেবে কাজ করে। তবে নদীর প্রবাহপথের ঘন ঘন পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘদিন দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধের সৃষ্টি হয়েছিল। ১৪৪ একর আয়তনের মুহুরীর চর, যেটি ধান চাষের উপযোগী, এ বিরোধের প্রধান কারণ ছিল। ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তির ভিত্তিতে নদীর প্রবাহের মাঝখানে সীমানা নির্ধারণের প্রস্তাব থাকলেও, বাংলাদেশ ১৯৪৭ সালের সীমান্ত নির্ধারণী পিলারের ভিত্তিতে অতিরিক্ত ৪৪ একর জমি দাবী করে। অবশেষে ২০১১ সালে, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরের সময় এই সীমান্ত সমস্যা সমাধানের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়, এবং দুই দেশ সীমান্ত চিহ্নিতকরণে সম্মত হয়।
বাংলাদেশে, মুহুরী নদীর অববাহিকা ফেনী জেলার ফেনী সদর, সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া ও পরশুরাম উপজেলা এবং চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলা জুড়ে অবস্থিত। মুহুরী সেচ প্রকল্প ১৯৮৬ সালে সম্পন্ন হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে এবং বঙ্গোপসাগর থেকে লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও, অভ্যন্তরীণ মৎস্য চাষের উন্নয়ন এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় এলাকা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
মুহুরী নদী একটি বন্যাপ্রবণ নদী। পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ফলে নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পায়, এবং সমতল এলাকায় বন্যা সৃষ্টি করে। নদীটির প্রস্থ সাধারণত ১৫০-২০০ মিটার, যা সাগরের কাছে বেড়ে যায়। মোহনায় চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার সীমানা নির্দেশ করে নদীটি। শুষ্ক মৌসুমে নদীটি হেঁটে পাড়ি দেওয়া সম্ভব।