১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রাখা যোদ্ধাদের আমরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিনি। এরা ছিলেন নানা পেশা, বয়স ও সামাজিক পরিমণ্ডলের মানুষ। কেউ ছিলেন সশস্ত্র যোদ্ধা, কেউ আবার গোপন সংবাদ সংগ্রহকারী, চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী, বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় নিয়োজিত। তাদের অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই, স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ এবং অসামান্য সাহস বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদেরকে চারটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়: (ক) নিয়মিত বাহিনী: পাকিস্তান সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ইপিআর, পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর তাদের যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। (খ) গণবাহিনী: সাধারণ মানুষ যারা ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। (গ) কাদেরিয়া বাহিনী: বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহিনী যারা দেশের ভেতরেই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। (ঘ) মুজিব বাহিনী: মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ করেছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনেকেই তাদের পরিচয় গোপন রেখে কাজ করেছেন। তাদের নাম, ঠিকানা, পেশা, বয়স ইত্যাদি তথ্য অনেক ক্ষেত্রে অজানা। তবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাদের অবদান স্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং সংগঠন, যেমন মুক্তিবাহিনী, কাদেরিয়া বাহিনী, মুজিব বাহিনী, মুক্তিযুদ্ধের সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, কুষ্টিয়া, রংপুর, সিলেট, টাঙ্গাইল সহ দেশের বিভিন্ন স্থান। এই স্থানগুলোতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিরক্ষার্থে স্মৃতিসৌধ, স্মৃতিস্তম্ভ এবং যাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ ও তুলে ধরার মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশপ্রেম ও মুক্তির সংগ্রামের গল্প তুলে ধরতে পারি।