ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন: একটি বিশ্লেষণ
২০২৪ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা রিউমার স্ক্যানারের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ৪৯টি ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ সম্পর্কে অন্তত ১৩টি মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ধর্মীয় সম্প্রীতি, অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সম্পর্কে বহু মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
কিছু উল্লেখযোগ্য মিথ্যা প্রতিবেদনের উদাহরণ:
- শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর তার নামে একটি ভুয়া খোলা চিঠি প্রচার করা হয়।
- একজন মুসলিম ব্যক্তির নিখোঁজ পুত্রের সন্ধানে মানববন্ধনের ভিডিওকে হিন্দু ব্যক্তির দাবিতে প্রচার করা হয়।
- ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইসিইউতে ভর্তির ভুয়া সংবাদ প্রচার করা হয়।
- বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ভিত্তিহীন দাবি প্রচার করা হয়।
- ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর ড. ইউনূসের ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার ভুয়া দাবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
- পাকিস্তানি জাহাজের মাধ্যমে অস্ত্র আনার মিথ্যা দাবি করা হয়।
- নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবী হিসেবে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়।
- বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ হওয়ার গুজব ছড়ানো হয়।
- বাংলাদেশে হিন্দু মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের মিথ্যা দাবি করে ভারতের প্রতিমা বিসর্জনের ভিডিও প্রচার করা হয়।
- শ্যামলী পরিবহনের বাসে হামলার মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়।
- চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবীর ওপর হামলার ভুয়া দাবি করা হয়।
- যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার সম্ভাবনার ভ্রান্তি ছড়ানো হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখযোগ্য গণমাধ্যম:
রিউমার স্ক্যানারের প্রতিবেদনে রিপাবলিক বাংলা, হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ, লাইভ মিন্ট, রিপাবলিক, ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ এবং আজতক-এর নাম উল্লেখযোগ্যভাবে উঠে এসেছে। এই গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশ সম্পর্কে একাধিক মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রভাব ও পরিণতি:
ভারতীয় গণমাধ্যমের এ ধরনের মিথ্যা প্রতিবেদন দুই দেশের সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই মিথ্যা তথ্য জনমনে ভুল ধারণা সৃষ্টি করে এবং দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি করে। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে দুই দেশের গণমাধ্যম তথ্য যাচাই করে সত্য সংবাদ প্রচারে গুরুত্ব আরোপ করবে। আরো তথ্য পাওয়া গেলে এই প্রতিবেদনটি আপডেট করা হবে।