মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা

আপডেট: ৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৭:২০ পিএম

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল সাটুরিয়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ এই উপজেলাটি বহু দিক দিয়ে অসাধারণ।

ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন:

প্রায় ১৪০.১৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সাটুরিয়া উপজেলা ২৩°৫১´ থেকে ২৪°০৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৫´ থেকে ৯০°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে নাগরপুর ও ধামরাই, দক্ষিণে মানিকগঞ্জ সদর, পূর্বে ধামরাই এবং পশ্চিমে দৌলতপুর ও ঘিওর উপজেলা সাটুরিয়ার সীমান্তবর্তী। ধলেশ্বরী, বংশী ও গাজীখালি নদী এই উপজেলার প্রধান জলাশয়।

জনসংখ্যা ও জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য:

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সাটুরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ১৭১৪৯৪ জন, যার মধ্যে পুরুষ ৮৩৬৫৩ জন এবং মহিলা ৮৭৮৪১ জন। ধর্মীয় জনসংখ্যার বিচারে ১৫৬৭৩২ মুসলমান, ১৪৭২৭ হিন্দু, ২৫ খ্রিস্টান, ৪ বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ৬ জন বাস করেন এখানে।

প্রশাসন ও ইতিহাস:

সাটুরিয়া থানা ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষে সাটুরিয়া থানা যুদ্ধ, তিল্লী গ্রামের যুদ্ধ এবং বনমালিপুরের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। সাটুরিয়া থানার পাশে একটি গণকবর এবং সাটুরিয়া পাইলট হাইস্কুল এলাকায় একটি বধ্যভূমি অবস্থিত।

ঐতিহাসিক স্থাপনা:

বালিয়াটির জমিদার বাড়ি, ধানকোড়া জমিদার বাড়ি, ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রম এবং কালুশাহের মাজার সাটুরিয়ার উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা। গৌরাঙ্গ মঠ (১৩৩২ বঙ্গাব্দ) ও রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম (১৯১০) ধর্মীয় দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থনীতি:

সাটুরিয়ার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি (৫৯.৪৫%), অকৃষি শ্রমিক (৪.৫০%), শিল্প (১.৭২%), ব্যবসা (১২.৮৬%), পরিবহন ও যোগাযোগ (৩.২৬%), চাকরি (৭.৪৮%), নির্মাণ (১.৫৮%), ধর্মীয় সেবা (০.১৫%), রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স (১.৩৮%) এবং অন্যান্য (৭.৬২%)। ধান, পাট, গম, সরিষা, আখ, আলু প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, কলা, পেয়ারা প্রধান ফল-ফলাদি। চালকল, আটাকল, বরফকল, করাতকল, মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং কারখানা উল্লেখযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান।

শিক্ষা:

শিক্ষার হার ৪৭.৩% (পুরুষ ৫২.১%, মহিলা ৪২.৭%)। ৫টি কলেজ, ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৩টি মাদ্রাসা রয়েছে। ভিকু মেমোরিয়াল কলেজ (১৯৬৬), সৈয়দ কালু শাহ কলেজ (১৯৯৮) উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

যোগাযোগ:

৯৫ কিমি পাকা রাস্তা, ১৫ কিমি আধা-পাকা রাস্তা এবং ৩৫০ কিমি কাঁচা রাস্তা সাটুরিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বর্ণনা করে।

স্বাস্থ্য:

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৬, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৩।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ:

১৯৮৯ সালে টর্নেডোতে সাটুরিয়া, হরগজ, তিল্লী, ফুকুরহাটি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হয়।

উপসংহার:

ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ সাটুরিয়া উপজেলা মানিকগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উন্নয়নের পথে অগ্রসর হলেও, এই উপজেলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯১৯ সালে সাটুরিয়া থানা প্রতিষ্ঠা
  • ১৯৮৪ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
  • ধলেশ্বরী, বংশী ও গাজীখালি নদীর অবস্থান
  • প্রাচীন জমিদার বাড়ি ও ঐতিহাসিক স্থাপনা
  • কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও উন্নয়ন

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।