মাদারীপুর, শিবচর

আপডেট: ৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:১৯ এএম
নামান্তরে:
মাদারীপুর শিবচর
মাদারীপুর, শিবচর

মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা: ঐতিহ্য, ভূগোল ও বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের মাদারীপুর জেলার অন্তর্গত শিবচর উপজেলা একটি ঐতিহাসিক ও কৃষিপ্রধান অঞ্চল। পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত এই উপজেলা ১৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এবং মাদারীপুর জেলার সর্বোত্তর অংশে অবস্থিত। এর উত্তরে পদ্মা নদী ও মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং ও শ্রীনগর উপজেলা এবং ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলা, দক্ষিণে রাজৈর ও মাদারীপুর সদর উপজেলা, পূর্বে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলা এবং পশ্চিমে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলা অবস্থিত। শিবচরের ভৌগোলিক অবস্থান ২৩°১৫´ থেকে ২৩°৩০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৫´ থেকে ৯০°১৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। এর মোট আয়তন ৩৩২.৯০ বর্গ কিলোমিটার।

ঐতিহাসিক পরিচয়:

ঐতিহাসিকদের মতে, প্রাচীনকালে এ অঞ্চল ইদিলপুর নামে পরিচিত ছিল এবং কোটালীপাড়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। একসময় এ অঞ্চলের প্রশাসনিক নাম ছিল নাব্যমন্ডল। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে এটি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। এ অঞ্চলে শিব শঙ্কর নামে এক ধার্মিক ব্যক্তির বসবাসের কথা বলা হয়, যার নামানুসারে শিবচর নামকরণ হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৩০ সালে শিবচর থানা প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে শিবচরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৭ই মে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণের শিকার হয় শিবচরবাসী, যার স্মৃতি রক্ষার্থে ১৭ মে গণহত্যা দিবস পালিত হয়। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিবাহিনী শিবচর বাজারে অবস্থিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্প গুড়িয়ে দেয় এবং ২৪ নভেম্বর রাতে শিবচর থানা আক্রমণ করে। প্রায় ১৬ ঘণ্টা স্থায়ী সম্মুখযুদ্ধের পর শিবচর মুক্ত হয়।

ভৌগোলিক অবস্থা ও অর্থনীতি:

শিবচর পদ্মা বিধৌত নিম্ম পলল ভূমি এলাকা। এর ভূ-ভাগ বেলে দোআঁশ মাটি দ্বারা গঠিত। এটি একটি কৃষিপ্রধান অঞ্চল। পদ্মা নদী, কুমার নদী, ময়নাকাটা নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদী শিবচর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি (৬৩.৯৫%), ব্যবসা (১৪.৫৭%), চাকরি (৬.১৬%) ইত্যাদি। চীনাবাদাম, ডাল, পিঁয়াজ, রসুন, পান, সরিষা এখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। কুটিরশিল্পের মধ্যে লৌহশিল্প, দারুশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ উল্লেখযোগ্য।

জনসংখ্যা ও শিক্ষা:

২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী শিবচরের জনসংখ্যা ছিল ৩১৮,২২০। গড় সাক্ষরতার হার ৪৩.৫%। এ উপজেলায় ১১৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১১টি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭৯টি মাদ্রাসা, ৬টি কলেজ, ২টি কারিগরি কলেজ রয়েছে।

সংস্কৃতি ও যোগাযোগ:

শিবচরের সংস্কৃতিতে হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ক্রিকেট ও ফুটবল এখানে বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশের জাতীয় মহাসড়ক এন৮ শিবচরকে ঢাকা, মাদারীপুর, বরিশাল ও পটুয়াখালীর সাথে সংযুক্ত করেছে। এছাড়াও জেলা সড়ক ও নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। তবে রেলযোগাযোগের সুবিধা নেই।

উপসংহার:

শিবচর উপজেলা ঐতিহ্য, ভূগোল ও অর্থনীতির দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এর উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

মূল তথ্যাবলী:

  • শিবচর উপজেলা মাদারীপুর জেলার অন্তর্গত
  • ১৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত
  • পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত
  • কৃষিপ্রধান অঞ্চল
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে
  • ঐতিহাসিক ইদিলপুরের সাথে সম্পর্কিত

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - মাদারীপুর শিবচর

২ জানুয়ারী ২০২৫, ৬:০০ এএম

মাদারীপুরের শিবচরে স্থানীয় সালিশে মিথ্যা বিচারের কারণে আত্মহত্যা।

২ জানুয়ারি ২০২৫

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দওপাড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী কাইমুদ্দিন শিকদার কান্দি এলাকায় হাফিজা আত্মহত্যা করে।