সদরপুর

আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫০ পিএম

সদরপুর: ফরিদপুর জেলার একটি ঐতিহাসিক উপজেলা

বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত সদরপুর উপজেলা অঞ্চলটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন ও সমৃদ্ধ কৃষিভূমি সমৃদ্ধ। পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ ও ভুবনেশ্বর নদীর তীরে অবস্থিত এই উপজেলার আয়তন ২৬১.২৯ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ১৮৬,২৫৪ জন, যার মধ্যে ৮৯,৬৬৪ পুরুষ এবং ৯৬,৫৯০ মহিলা। মুসলিম জনসংখ্যা ১৭৫,৭৩৬ এবং হিন্দু ১০,৫১৮।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

সদরপুরের নামকরণের সঠিক উৎস নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে জনশ্রুতি অনুযায়ী, স্থানীয় বাইশরশি জমিদারদের নৌকা ঘাটের জন্য ‘সদর’ শব্দ ব্যবহার করা হতো, যা থেকে নামকরণ হয়। এছাড়াও, মোগল আমলে জমি পরিমাপের একক ‘রশি’ (১০০ হাত) ব্যবহারের কারণে অনেক গ্রামের নামের শেষে ‘রশি’ শব্দ যুক্ত রয়েছে। ১৮৬৩ সালে সদরপুর থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। বাইশরশি জমিদার বাড়ি (রায় বাহাদুর রাজেন্দ্র রায়চৌধুরী), কৃষ্ণপুর কালীমন্দির, বাইশরশি মঠ (সমাধিস্থল), বাইশরশি শিবসুন্দরী একাডেমী ইত্যাদি ঐতিহাসিক স্থাপনা এখানে অবস্থিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাজিতপুর ও জামতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনার যুদ্ধ হয়, এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

অর্থনীতি ও সম্পদ:

সদরপুরের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ৬৭.৭৯% জনসংখ্যা কৃষিতে জড়িত। ধান, পাট, তৈলবীজ, ডাল, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। পাট, তালের গুড়, শাকসবজি প্রধান রপ্তানিদ্রব্য। মৎস্য, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খামার রয়েছে। ধানকল, আটাকল, বরফকল, তেলকল, স্পিনিং মিলস ইত্যাদি শিল্প প্রতিষ্ঠানও এখানে অবস্থিত। স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশের কাজ ইত্যাদি কুটির শিল্পও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:

শিক্ষার হার ৪৩.২%। ২টি কলেজ, ২১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৮টি মাদ্রাসা রয়েছে। কৃষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১০) ও বাইশরশি শিবসুন্দরী একাডেমি (১৯১৪) উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য সেবার জন্য ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১টি হাসপাতাল, ৫টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ৫টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ২টি ক্লিনিক রয়েছে।

যোগাযোগ:

১০০ কিমি পাকা রাস্তা, ৭৭ কিমি আধা-পাকা রাস্তা এবং ২৯৬ কিমি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। নৌপথও যোগাযোগের একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

সংস্কৃতি:

সদরপুরের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন, সঙ্গীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, যাত্রা, নাটক ইত্যাদি। বিশ্ব জাকের মঞ্জিল ও চন্দ্রপাড়া পীর সাহেবের দরবার শরীফ এই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনা।

উপসংহার:

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক ঐতিহ্য, সমৃদ্ধ কৃষি ও উন্নয়নশীল অবকাঠামো সদরপুর উপজেলার বৈশিষ্ট্য। ভবিষ্যতে পর্যটন খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে আরও বেশি উন্নয়ন সাধিত হতে পারে।

মূল তথ্যাবলী:

  • সদরপুর উপজেলা ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত
  • ২৬১.২৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তন
  • প্রায় ১৮৬,২৫৪ জন জনসংখ্যা
  • কৃষি প্রধান অর্থনীতি
  • ঐতিহাসিক বাইশরশি জমিদার বাড়ি

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - সদরপুর