বেগমগঞ্জ: নোয়াখালীর একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ উপজেলা। ২৩৮.৩৭ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলাটি ২২°৫২´ থেকে ২৩°০৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৯´ থেকে ৯১°১৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে সোনাইমুড়ি ও চাটখিল, দক্ষিণে নোয়াখালী সদর, কবিরহাট ও সেনবাগ, পূর্বে সেনবাগ এবং পশ্চিমে লক্ষ্মীপুর সদর ও চাটখিল উপজেলার সীমানা বেষ্টন করে আছে বেগমগঞ্জ। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে জনসংখ্যা ছিল ৫৪৯৩০৮ জন, যার মধ্যে পুরুষ ২৬১২১০ এবং মহিলা ২৮৮০৯৮। মুসলিম ৫২১২০৬, হিন্দু ২৮০৪৯ এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী অল্প সংখ্যক। ডাকাতিয়া নদী ও ওয়াপদা খাল বেগমগঞ্জের উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
বেগমগঞ্জের ইতিহাস: ১৮৯২ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বেগমগঞ্জ বর্তমানে উপজেলা। মুগল আমলের গোপালপুর চৌধুরী বাড়ির মসজিদ এখানকার একটি প্রাচীন নিদর্শন। ১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা স্তিমিত করার লক্ষ্যে মহাত্মা গান্ধী এখানে শান্তিমিশনে আসেন, যা বেগমগঞ্জের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধেও বেগমগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২৫ এপ্রিল ১৯৭১ চৌমুহনী-লক্ষ্মীপুর সড়কের আমিনবাজারে, ২ জুলাই চন্দ্রগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের রাজাকার ক্যাম্পে এবং ১৯ আগস্ট গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াহাট বাজারে সংঘর্ষ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ৬ ডিসেম্বর উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। চৌমুহনী ও সোনাইপুরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।
অর্থনীতি ও উন্নয়ন: বেগমগঞ্জের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, চিনাবাদাম, ডাল, সরিষা, শাকসবজি প্রধান ফসল। আম, কাঁঠাল, নারিকেল প্রধান ফল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। বেগমগঞ্জে পাটকল, ধানকল, ময়দাকল, তেলকল ইত্যাদি শিল্প কলকারখানা ও স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প সহ বিভিন্ন কুটিরশিল্প বিদ্যমান। উপজেলায় ৩৯৬ কিমি পাকারাস্তা, ৩৬ কিমি আধা-পাকারাস্তা এবং ১২৭৮ কিমি কাঁচারাস্তা রয়েছে। ৯ কিমি রেলপথ ও ৩ টি রেলস্টেশন আছে। উপজেলার সব ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: বেগমগঞ্জের শিক্ষার হার ৫৯.৩%। ৫টি কলেজ, ৬৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবং ৩২টি মাদ্রাসা রয়েছে। বেগমগঞ্জ এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট, বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যসেবার জন্য ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১টি হাসপাতাল, ১০টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং আরও অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বেগমগঞ্জ জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে। ১৯৭০ সালের জলোচ্ছ্বাস এবং ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।