সেনবাগ উপজেলা: নোয়াখালীর একটি ঐতিহ্যবাহী প্রশাসনিক এলাকা
বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত সেনবাগ উপজেলা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। প্রায় ১৫৯.৩৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা নোয়াখালী জেলা সদর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। উত্তরে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ, দক্ষিণে কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ, পূর্বে ফেনীর দাগনভূঞা এবং পশ্চিমে বেগমগঞ্জ ও সোনাইমুড়ি উপজেলা সেনবাগকে ঘিরে রয়েছে।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা নোয়াখালী জেলার অংশ হিসেবে সেনবাগের ইতিহাসও বেশ প্রাচীন। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে মিথিলা থেকে আগত বিশ্বম্ভর সেন এখানে ভুলুয়া নামক একটি ক্ষুদ্র রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এই রাজ্য পরবর্তীতে সভ্যতা, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় সমৃদ্ধ হয়। ১৮২১ সালে ভুলুয়াকে জেলা ঘোষণা করা হয় এবং বর্তমান সেনবাগ এলাকা তখন বেগমগঞ্জ থানার অন্তর্গত ছিল। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে ১৯২২ সালে সেনবাগ গ্রামে একটি ফাঁড়ি থানা স্থাপন করা হয়, যা পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ থানায় রুপান্তরিত হয়। ১৯৮৩ সালে সেনবাগ থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।
জনসংখ্যা ও অর্থনীতি:
সেনবাগের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ২,৮২,৮৯৪। জনসংখ্যা ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৭৭৫.১৯। অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, পান, শাকসবজি, আম, কাঁঠাল, কলা প্রধান ফসল ও ফল। উপজেলায় ২৫টি হাটবাজার রয়েছে, যার মধ্যে সেনবাগ বাজার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
শিক্ষার হার ৫৬.৯৪%। উপজেলায় ৩টি কলেজ, ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭টি কমিউনিটি স্কুল, ১২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২৫টি মাদ্রাসা রয়েছে। সংস্কৃতির দিক থেকে সেনবাগ সমৃদ্ধ। ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি, প্রাচীন মসজিদ-মন্দির, জাতীয়তাবাদী গানের ঐতিহ্য এই উপজেলার মনোমুগ্ধকর দিক। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত চার যুবকের স্মৃতি সেনবাগের ইতিহাসে স্মরণীয়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
ডাকাতিয়া নদীসহ বিভিন্ন জলাশয় সেনবাগের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধন করে। ভূঁইয়ার দীঘি, কাদরার কিল্লা, বীরকোটের বীরের মূর্তি প্রভৃতি প্রাচীন স্থাপনাও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সেনবাগ উপজেলা স্টেডিয়াম (বর্তমানে শহীদ তরিক উল্ল্যাহ বীর বিক্রম স্টেডিয়াম) এ উপজেলার ক্রীড়া সংস্কৃতির প্রতীক।
সেনবাগ উপজেলা ঐতিহ্যের ধারক, উন্নয়নের পথে অগ্রসরমান একটি অঞ্চল। এই উপজেলার সমৃদ্ধ ইতিহাস, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটন এবং উন্নয়নের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে।