বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকট: জ্বালানি সংকট, অর্থনৈতিক মন্দা ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফল
গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এই সংকটের পেছনে একাধিক কারণ কাজ করছে, যার মধ্যে প্রধান হলো জ্বালানি সংকট, ডলার সংকট এবং অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ উন্নয়ন।
জ্বালানি সংকট:
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের বেশিরভাগই গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। গ্যাসের ঘাটতি, আমদানি করা এলএনজি-র সরবরাহে বিঘ্ন, এবং কয়লার অভাব বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে সামিটের এলএনজি টার্মিনালের বন্ধ থাকার ফলে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। আর বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
ডলার সংকট:
ডলার সংকটের কারণে জ্বালানির আমদানি কঠিন হয়ে পড়েছে। বিদেশ থেকে জ্বালানি কিনতে না পারায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছে না। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির কাছে সরকারের বিল পরিশোধের দেরিও এই সংকট আরও জটিল করে তুলছে। ভারতের আদানি গ্রুপের কাছেও সরকারের বকেয়া বিল রয়েছে, যার কারণে আদানি তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।
অপরিকল্পিত উন্নয়ন:
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অপরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদার বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়নি। এছাড়াও, অনেকেই অভিযোগ করছেন যে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নির্মিত বৃহৎ কয়লা-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির (পায়রা, রামপাল, এস আলম, মাতারবাড়ী) উৎপাদিত বিদ্যুৎ ঢাকায় আনার জন্য যথেষ্ট সরবরাহ লাইন নেই।
সমাধান:
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাতের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য দেশীয় জ্বালানি উৎপাদন বাড়াতে হবে, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের দিকে ঝুঁকতে হবে, এবং সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। বিকল্প সমাধান হিসেবে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, এবং জলবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে।