বাঁকখালী নদী

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম
নামান্তরে:
বাঁকখালি নদী
বাকখালী নদী
বাঁকখালী নদী

বাঁকখালী নদী: বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ

বাঁকখালী নদী, বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। ৬৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সর্পিলাকার নদীটির গড় প্রস্থ ৯৫ মিটার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক এর পরিচিতি নম্বর হল পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী নং ৯। ভারতের মিজোরাম রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় থেকে উৎসারিত স্রোতধারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে মিলিত হয়ে বাঁকখালী নদীর সৃষ্টি করে। নদীটি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ও কক্সবাজারের রামু উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মহেশখালী চ্যানেলে পতিত হয়।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) আরাকান দখলের পর হাজার হাজার শরণার্থী বাঁকখালী নদীর তীরে আশ্রয় নেয়। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স তাদের পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দুর্ভাগ্যবশত, তার সমাধি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। এই নদী আরব বণিক, পর্তুগিজ, আরাকান জলদস্যু এবং ব্রিটিশ শাসকদের সাক্ষী হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনী এখানে কাঠের জেটি নির্মাণ করে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ১৫ ডিসেম্বর ভারতীয় বিমানবাহী জাহাজ 'বিক্রান্ত'সহ অন্যান্য জাহাজ বাঁকখালী নদী দিয়ে কক্সবাজারে অবতরণ করে।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

বাঁকখালী নদী কক্সবাজারের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নদীর জোয়ারভাটা কক্সবাজার সদর ও রামুর নিম্নাংশ পর্যন্ত প্রভাবিত করে। শুষ্ক মৌসুমে এর ঊর্ধ অববাহিকার জলধারা ক্ষীণ হয়, মে থেকে সেপ্টেম্বর বন্যা দেখা দেয়। মোহনার কাছাকাছি বাংলাদেশের প্রথম রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। শীতকালে নদীর তীরে চরে সবজি চাষ করে হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থান পায়। নদীর মিঠা পানিতে শুষ্ক মৌসুমে হাজার হাজার একর জমি চাষ হয়। লবণ ও মৎস্য চাষও ব্যাপক। বাঁকখালী নৌকা বাইচ জনপ্রিয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এখানে জাহাজ ভাসা উৎসব পালন করে।

জীববৈচিত্র্য:

বাঁকখালী নদী ৩৫ প্রকার মাছ এবং ১০ প্রজাতির চিংড়ির আবাসস্থল। বঙ্গোপসাগরের ৪০০-এর বেশি সামুদ্রিক প্রাণী এ নদীর মোহনায় ডিম ছাড়ে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এর প্যারাবনে ১২ হাজারের বেশি প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৫৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৬২ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ২০৭ প্রজাতির মাছ এবং ২০৬ প্রজাতির পাখি (১৪৯ দেশি ও ৫৭ অতিথি পাখি)।

বর্তমান অবস্থা:

একসময় গোলপাতা ও কেওড়ার জন্য বিখ্যাত বাঁকখালী নদীর তীরে বর্তমানে বাইনসহ নানাজাতের ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ দেখা যায়। নদীর বর্তমান পরিস্থিতি ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গবেষণা ও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • বাঁকখালী নদী বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী।
  • এটি ৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৯৫ মিটার গড় প্রস্থের।
  • নদীটি ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী, মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
  • এটি কক্সবাজারের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
  • নদীটি জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।