ফ্রান্স সেনাবাহিনী: ঐতিহ্য, আধুনিকীকরণ ও আফ্রিকার প্রভাব
ফ্রান্সের সেনাবাহিনী বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও ঐতিহ্যবাহী সামরিক বাহিনী। দীর্ঘ ইতিহাস ধরে এটি বিশ্বের বহু গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। বিংশ শতাব্দীর তুলনায় এখন এর আকার ছোট হলেও এর ক্ষমতা ও প্রভাব অপরিসীম। এর প্রধান সেনাপতি 'চীফ অব স্টাফ' নামে পরিচিত এবং জেনারেল পদমর্যাদার ধারক। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সে ১৮ বছর বয়সী সকল তরুণ-তরুণীর সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক ছিল, যা ২০০১ সালে বাতিল করা হয়।
২০১৬ সালে ফ্রান্সের সামরিক বাহিনী পুনর্গঠিত হয়। বর্তমানে দুটি ডিভিশন (১ম ও ৩য় সাঁজোয়া ডিভিশন), প্রতিটিতে তিনটি করে ব্রিগেড নিয়ে গঠিত। সৈন্যদের নিয়োগে দুই ধরনের পদ্ধতি রয়েছে: এক বছর মেয়াদী স্বেচ্ছাসেবী এবং তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদী স্বেচ্ছাসেবী। অনাযুক্তক সেনারা (Non-commissioned officers) পাঁচ বছর পর চাকরি ত্যাগ করতে পারে। তাদের মৌলিক প্রশিক্ষণ ৮ মাস এবং যুদ্ধ বিষয়ক প্রশিক্ষণ ৪ থেকে ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত।
ফরাসি সামরিক বাহিনীর অনেক কর্মকর্তাই সাবেক সেনা বা অনাযুক্তক সেনা। সেন্ট সেইর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কয়েকজন লেফটেন্যান্ট পদ লাভ করেন।
সাম্প্রতিককালে, ফ্রান্সের আফ্রিকার উপনিবেশিক ইতিহাসের প্রভাব স্পষ্ট হচ্ছে। আইভরি কোস্ট, সেনেগাল, চাদ, মালি, বুরকিনা ফাসো এবং নাইজার সহ বহু আফ্রিকান দেশ ফ্রান্সকে তাদের ভূখণ্ড থেকে সামরিক ঘাঁটি সরাতে বলেছে। এই ঘটনা ফ্রান্সের আফ্রিকার রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাবের ক্ষয়ের সাক্ষ্য বহন করে। বর্তমানে ফ্রান্সের আফ্রিকায় মাত্র দুটি দেশে (জিবুতি ও গ্যাবন) সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টাও চলমান। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির ঝুঁকি মোকাবেলায় ‘রেড টিম’ নামে একটি বিশেষ দল তৈরি করা হচ্ছে, যাতে বিজ্ঞান কল্পকাহিনি লেখক জড়িত থাকবেন। নতুন প্রযুক্তি, যেমন ড্রোন-বিধ্বংসী অস্ত্র ও জেট শক্তিতে চালিত ‘হোভারবোর্ড’ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এইসব প্রচেষ্টা ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর ভবিষ্যৎ শক্তি ও ক্ষমতা নির্ধারণ করবে।