ফটিকছড়ি: চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত চট্টগ্রাম জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল ফটিকছড়ি। প্রশাসনিকভাবে এটি ফটিকছড়ি উপজেলার সদর। চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৫৬.৮ কিমি দূরত্বে অবস্থিত এই ছোট্ট শহরটি ধুরং নদীর তীরে অবস্থিত। আঞ্চলিক মহাসড়ক R160 (৯৮ কিমি দীর্ঘ) হাটহাজারী থেকে শুরু হয়ে ফটিকছড়ি হয়ে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত।
- *জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থান:**
ফটিকছড়ি শহরের জনসংখ্যা প্রায় ১০০,০০০, যার মধ্যে ৪৫,০০০ পুরুষ ও ৫৫,০০০ নারী। মোট হোল্ডিং সংখ্যা ৭২৫২। এর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২২°৪৫′১৩″ উত্তর ৯১°৪২′৫৪″ পূর্ব। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ২০.৩ মিটার। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী উপজেলার আয়তন ৭৭৩.৫৫ বর্গ কিমি।
- *প্রশাসন ও উন্নয়ন:**
২০১১ সালে ফটিকছড়ি পৌরসভা গঠিত হয়, যা ৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। পূর্বে শহরের আয়তন ছিল ২২.০৩ বর্গ কিমি, যা বর্তমানে পৌর এলাকা অন্তর্ভুক্ত হয়ে ২৫.০২ বর্গ কিমি হয়েছে। ফটিকছড়ি থানা ১৯১৮ সালে গঠিত হয়।
- *ঐতিহাসিক গুরুত্ব:**
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ফটিকছড়ি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এম. আর. সিদ্দিকী, মেজর জিয়াউর রহমান, জোনাল কমান্ডার মির্জা আবু মনসুর সহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এখানে রামগড়ে মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প স্থাপন করেন। চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য ফটিকছড়ি পথ ব্যবহার করতেন। প্রায় ১৫০০ মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এখানে ৪টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
- *অর্থনীতি ও সংস্কৃতি:**
ফটিকছড়ির অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। চা, রবার, ধান, আলু, পিঁয়াজ ইত্যাদি প্রধান ফসল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে। কুটিরশিল্পের মধ্যে মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, দারুশিল্প উল্লেখযোগ্য। শিক্ষার হার ৫১.৪%। ফটিকছড়ি ডিগ্রি কলেজ, ফটিকছড়ি করোনেশন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও মাদ্রাসা রয়েছে। বিভিন্ন হাটবাজার ও মেলাও এখানে অনুষ্ঠিত হয়।
- *উপসংহার:**
ফটিকছড়ি একটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। এর উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।