প্রত্যর্পণ

আন্তর্জাতিক আইনে, প্রত্যর্পণ (Extradition) হল একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া যেখানে একটি দেশ অন্য দেশের কাছে অপরাধের জন্য বিচারের উদ্দেশ্যে একজন ব্যক্তিকে সমর্পণ করে। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার, সাইবার অপরাধ ইত্যাদি আন্তর্জাতিক অপরাধের বৃদ্ধির সাথে সাথে এর গুরুত্ব আরও বেড়েছে।

প্রত্যর্পণের প্রয়োজন হয় যখন কোন অপরাধী পলাতক বিচার এড়াতে একটি দেশ থেকে অন্য দেশে পালিয়ে যায়। প্রত্যর্পণযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে কিন্তু দেশ ত্যাগ করেছে, এবং যারা অনুপস্থিতিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। প্রত্যর্পণ নির্বাসন, বহিষ্কার ইত্যাদি পদ্ধতি থেকে আলাদা।

প্রত্যর্পণের পদ্ধতি দেশগুলোর মধ্যে চুক্তি বা বহুপাক্ষিক চুক্তি দ্বারা নির্ধারিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ টিরও বেশি দেশের সাথে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, প্রক্রিয়াটি সাধারণতঃ মার্কিন ফেডারেল আদালতে অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে শুরু হয় এবং আদালতের সিদ্ধান্তের পর বিদেশী সরকারের কাছে পরোয়ানা পাঠানো হয়।

গ্রহীতা দেশ তার আইন এবং চুক্তি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়। চুক্তিবিহীন দেশের ক্ষেত্রে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যর্পণ সম্পন্ন হতে পারে। সাধারণত, অপরাধ উভয় দেশেই শাস্তিযোগ্য হলেই প্রত্যর্পণ মঞ্জুর হয়। রাষ্ট্রদ্রোহ, গুপ্তচরবৃত্তি ইত্যাদি রাজনৈতিক অপরাধের ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে। দ্বৈত ঝুঁকি (double jeopardy) -এর কারণেও প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে।

অনেক দেশ এমন লোকদের প্রত্যর্পণ করতে অস্বীকার করে যারা অনুরোধকারী দেশে নির্যাতন, মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারে। চার্লস এনজি (Charles Ng) এর প্রত্যর্পণের ঘটনা এটির এক উদাহরণ। এছাড়া, অনেক দেশ তাদের নিজস্ব নাগরিকদের প্রত্যর্পণ করতে অস্বীকার করে। রোমান পোলানস্কি (Roman Polanski) এর ঘটনা এটির এক উদাহরণ।

প্রত্যর্পণ চুক্তির অভাবও একটি প্রধান বাধা। এডওয়ার্ড স্নোডেন (Edward Snowden) এর ক্ষেত্রে, রাশিয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকার কারণে তাকে প্রত্যর্পণ করা সম্ভব হয়নি। হংকং প্রত্যর্পণ বিল (Hong Kong extradition bill) এর ঘটনা প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার রাজনৈতিক দিকটি তুলে ধরে। এই বিলের বিরোধিতার কারণে হংকংয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত বিলটি প্রত্যাহার করা হয়। প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

মূল তথ্যাবলী:

  • প্রত্যর্পণ হল একটি আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়া যেখানে এক দেশ অন্য দেশের কাছে অপরাধীকে সমর্পণ করে।
  • এটি সাধারণত দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে হয়।
  • প্রত্যর্পণের প্রয়োজন হয় পলাতক অপরাধীদের বিচারের জন্য।
  • রাজনৈতিক অপরাধ, দ্বৈত ঝুঁকি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা ইত্যাদি কারণে প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান হতে পারে।
  • চুক্তিবিহীন দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ কূটনীতির উপর নির্ভর করে।
  • এডওয়ার্ড স্নোডেন ও হংকং প্রত্যর্পণ বিল এর ঘটনা প্রত্যর্পণের রাজনৈতিক দিক তুলে ধরে।

গণমাধ্যমে - প্রত্যর্পণ

২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:০০ এএম

এই ঘটনার পর বাংলাদেশ ভারতের কাছে প্রত্যর্পণ চেয়েছে।

বিমান ব্যানার্জি প্রত্যর্পণ বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন।

26/12/2024

শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বাংলাদেশ তাঁকে ফেরত চেয়েছে।

২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে আবেদন করেছে।

২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:০০ এএম

প্রত্যর্পণের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।