প্রতারিত অভিবাসী: একটি বাস্তবতা
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মসংস্থানের আশায় প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ পাড়ি জমায়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও এই অভিবাসন প্রক্রিয়া প্রতারণা ও শোষণের ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়। অনেক অভিবাসীই বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার শিকার হয়ে দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন।
প্রতারণার ধরণ:
প্রতারণার ধরণ বিচিত্র। অনেক ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীরা ভুয়া চাকরির প্রস্তাব দিয়ে অভিবাসীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। অনেকেই বিদেশে গিয়ে দেখেন তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরি নেই, বেতন কম, অথবা কাজের পরিবেশ খুবই অস্বাস্থ্যকর। আবার, ভিসা বাণিজ্যের মাধ্যমেও অনেক অভিবাসী প্রতারিত হন। এছাড়াও, কিছু ক্ষেত্রে মানবপাচারের শিকারও হচ্ছেন অভিবাসীরা।
সংখ্যা ও তথ্য:
বিএমইটি (জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে ১১১২ জন অভিবাসী প্রতারণার অভিযোগ করেছেন। এই সংখ্যা বছরের শেষ নাগাদ দ্বিগুণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়েরের তুলনায় প্রকৃত অভিযোগের সংখ্যা অনেক বেশি। অনেক অভিবাসীই আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়ের করেন না বিভিন্ন কারণে।
প্রতিকার ও সমাধান:
অভিবাসীরা প্রতারিত হলে বিএমইটিতে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। বিএমইটি কিছু কিছু অভিযোগ সমাধান করলেও, সমস্যার সমাধানের হার কম। এছাড়াও, বিভিন্ন এনজিও তৃণমূল পর্যায়ে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সহায়তা করছে। তবে এসব প্রয়াস পর্যাপ্ত নয়।
নারী অভিবাসী:
তুলনামূলকভাবে নারী অভিবাসীরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। শোষণ, নির্যাতন এবং মানবপাচারের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা তাদের বেশি।
ভবিষ্যৎ করণীয়:
প্রতারিত অভিবাসীদের সমস্যা সমাধানে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন। ভিসা বাণিজ্য বন্ধ করা, দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, অভিবাসীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা, এবং বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোতে শ্রম শাখাগুলোকে আরো সক্রিয় করা জরুরি। এছাড়াও, দক্ষ কর্মী প্রেরণের উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন যাতে অভিবাসীরা প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি কমে। সরকার, এনজিও এবং অভিবাসীদের সম্মিলিত প্রয়াসেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।