পিরোজপুর: বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত একটি ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ জেলা। সুন্দরবনের কাছাকাছি অবস্থান, নদ-নদী ও জলাভূমির সমারোহ, এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি পিরোজপুরকে করে তুলেছে অনন্য। জেলার নামকরণের সঠিক ইতিহাস অজানা হলেও, ফিরোজ শাহ নামক এক ঐতিহাসিক ব্যক্তির নামানুসারে এর নামকরণ হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। ১৮৫৯ সালের ২৮ অক্টোবর ফিরোজপুর মহাকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১৯৮৪ সালে জেলায় রূপান্তরিত হয়।
পিরোজপুরের ভৌগোলিক অবস্থান: পিরোজপুর জেলা দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশে অবস্থিত। বলেশ্বর, কালীগঙ্গা, কচা, সন্ধ্যা এবং দামোদর নদী জেলাটিকে বিভক্ত করেছে। সুন্দরবনের ঘন সবুজ বনানী জেলার সৌন্দর্য্য বর্ধন করেছে।
জনসংখ্যা ও অর্থনীতি: ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, পিরোজপুরের জনসংখ্যা প্রায় ১১ লক্ষ। কৃষি জেলাটির অর্থনীতির মূল ভিত্তি। ধান, গম, আখ, ডাল, পান, সুপারি, নারিকেল, আমড়া প্রভৃতি ফসল এখানে উৎপন্ন হয়। মৎস্য, গবাদিপশু পালন ও কুটিরশিল্পও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ঐতিহাসিক ঘটনা: পিরোজপুরের ইতিহাস সমৃদ্ধ। ১৭৫৩ সালে ফিরোজ শাহ সরদারের মৃত্যুর ঘটনা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জেলার অংশগ্রহণ, এবং কৃষক বিদ্রোহের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধে পিরোজপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এবং ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে জেলা পাকিস্তানি শাসন থেকে মুক্ত হয়। বলেশ্বর খেয়াঘাট মুক্তিযুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য: পিরোজপুরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ। প্রবাদ প্রবচন, বিয়ের গান, লোকসঙ্গীত, যাত্রা, নাটক ইত্যাদি এখানে প্রচলিত। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ঐতিহ্যের জীবন্ত ধারণা রক্ষায় অবদান রাখছে। রায়েরকাঠী জমিদারবাড়ি, পুরানো সরদার বাড়ি, পিরোজপুর জামে মসজিদ ইত্যাদি জেলার ঐতিহাসিক স্থান।