মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯ মে ১৯০৮ - ৩ ডিসেম্বর ১৯৫৬) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন অন্যতম প্রভাবশালী বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তার প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘মানিক’ ছিল তার ডাকনাম। বিহারের সাঁওতাল পরগনা, বর্তমান ঝাড়খণ্ডের দুমকা শহরে তার জন্ম। তার পৈতৃক বাড়ি ছিল ঢাকার বিক্রমপুর (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ) এর লৌহজং এর গাওদিয়া গ্রামে। পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা।
পিতার চাকরির সূত্রে মানিকের শৈশব ও ছাত্রজীবন কেটেছে বাংলা, বিহার ও ওড়িষার বিভিন্ন শহরে, যেমন দুমকা, আরা, সাসারাম, কলকাতা, বারাসাত, বাঁকুড়া, তমলুক, কাঁথি, মহিষাদল, গুইগাদা, শালবণি, নন্দীগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল ইত্যাদি। তিনি মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে ১৯২৬ সালে এন্ট্রান্স এবং বাঁকুড়া ওয়েসলিয়ান মিশন কলেজ থেকে ১৯২৮ সালে আই.এস.সি. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিত বিষয়ে ভর্তি হলেও, সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশের ফলে তিনি পড়াশোনা অসম্পূর্ণ রেখে দেন।
মানিকের সাহিত্যকর্মের মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব তার রচনায় প্রভাব বিস্তার করেছে। তিনি ৪০টি উপন্যাস এবং ৩০০টিরও বেশি ছোটোগল্প রচনা করেছেন। 'পুতুলনাচের ইতিকথা', 'দিবারাত্রির কাব্য', 'পদ্মা নদীর মাঝি' তার বিখ্যাত উপন্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম। 'অতসী মামী', 'প্রাগৈতিহাসিক', 'ছোট বকুলপুরের যাত্রী' ইত্যাদি গল্পসংকলন বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। ইংরেজি ছাড়াও তার রচনাসমূহ বহু বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
১৯৩৮ সালে সুরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে কমলা দেবীর সাথে তার বিবাহ হয়। ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। ১৯৪৬ সালে প্রগতি লেখক সংঘের যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে প্রগতি লেখক ও শিল্পী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। তীব্র আর্থিক সংকট ও দীর্ঘদিনের অসুস্থতার পর ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর মাত্র ৪৮ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য একটি অমূল্য অবদান।