পল্টন থানা

ঢাকার পল্টন থানা: ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও বর্তমান রূপ

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ থানা হল পল্টন থানা। এটি ঢাকাকে "পুরান ঢাকা" এবং "নতুন ঢাকা" হিসেবে বিভক্ত করার ক্ষেত্রে প্রায়শই ঢাকার কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০০৫ সালের ২৭শে জুন মতিঝিল থানার অংশবিশেষ নিয়ে পল্টন থানার গঠন করা হয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উদ্যোগে।

  • *ঐতিহাসিক পটভূমি:**

পল্টন নামটি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি সেনানিবাস থেকে এসেছে। ইংরেজি "প্লাটুন" শব্দ থেকে এসেছে এই নামটি, যদিও আকারে এটি একটি ব্যাটালিয়ন বা রেজিমেন্টের সমান ছিল। পুরানা পল্টন, পুরানা পল্টন লেন, নয়া পল্টন, তোপখানা, এবং ফুলবাড়িয়া রেলপথ পর্যন্ত এলাকা জুড়ে ছিল এই সেনানিবাস। ১৮৪০ সালে এটি রমনা, বেগুনবাড়ি, পরে লালবাগ দুর্গে, এবং ১৮৫৭ সালের পরে মিল ব্যারাকে স্থানান্তরিত হয়। সেনানিবাস স্থানান্তরের পর, এই এলাকার একটি অংশ পৌরসভার তত্ত্বাবধানে বাগানে রূপান্তরিত হয়, যা "কোম্পানী বাগিচা" নামে পরিচিত ছিল। বাকি অংশে একটি বিশাল মাঠ ছিল, যা ঢাকা কলেজের ছাত্ররা খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করতো।

  • *পল্টনের উন্নয়ন ও বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ:**

১৯৩০ সাল পর্যন্ত এখানে জনবসতি ছিল খুব কম। কিন্তু ধীরে ধীরে পল্টন অসংখ্য নামী ব্যক্তি ও পরিবারকে গর্বিত করেছে। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে গাজী, আবেদিন, চৌধুরী, এবং রউফ পরিবারসহ আরও অনেক পরিবার এখানে বসতি স্থাপন করে শহরের উন্নয়নে অবদান রাখে। আলহাজ্ব আবদুল হালিম চৌধুরী, এন.এন. গাজী, গাজী গোলাম মোস্তফা, নির্মল সেন, খুরশিদ আলম, শাহনাজ রহমতুল্লাহ, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু এবং আরও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ পল্টনের সাথে জড়িত ছিলেন।

  • *ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:**

পল্টন থানার আয়তন প্রায় ১.৪২ বর্গ কিমি। এর উত্তর ও পূর্বে মতিঝিল থানা, দক্ষিণে সূত্রাপুর ও বংশাল থানা, এবং পশ্চিমে শাহবাগ ও রমনা থানা অবস্থিত। জনসংখ্যার বিস্তারিত তথ্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে পাওয়া যাবে।

  • *অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড:**

পল্টন ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখানে অসংখ্য শপিং কমপ্লেক্স, হোটেল, রেস্তোরাঁ, এবং অটোমোবাইল মার্কেট রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জও এখানেই অবস্থিত।

  • *শিক্ষা ও সংস্কৃতি:**

পল্টনে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ঢাকা সিটি ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, টিএন্ডটি কলেজ, পুরানা পল্টন মহিলা ডিগ্রি কলেজ, মতিঝিল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (বালক ও বালিকা) উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বেশ কয়েকটি মসজিদ, মন্দির, এবং গির্জা এখানে অবস্থিত। রাজমণি ও জোনাকী সিনেমা হলের মতো প্রতিষ্ঠান গুলির ঐতিহ্যও পল্টনের সাথে জড়িত।

  • *উপসংহার:**

পল্টন থানা ঢাকার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ভাবমূর্তির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক এলাকা নয়, বরং এক অসাধারণ ইতিহাস, বর্ণিল সংস্কৃতি, এবং গতিশীল অর্থনীতির আধার।

মূল তথ্যাবলী:

  • পল্টন থানা ২০০৫ সালে মতিঝিল থানার অংশ থেকে গঠিত হয়।
  • ব্রিটিশ সেনানিবাসের ঐতিহ্য ধারণ করে পল্টন নামকরণ।
  • ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
  • অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, এবং গির্জা অবস্থিত।
  • বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের আবাসস্থল ও কর্মক্ষেত্র।

গণমাধ্যমে - পল্টন থানা

২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:০০ এএম

জোন-১ এর অন্তর্ভুক্ত থানা।