পরীক্ষা: এক গভীর বিশ্লেষণ
পরীক্ষা, শব্দটি শুধুমাত্র শিক্ষাঙ্গনের সীমারেখায় আবদ্ধ নয়; বরং বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞানসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর গুরুত্ব অপরিসীম। কোনো ধারণাকে সমর্থন, খণ্ডন বা যাচাই করার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিই হলো পরীক্ষা। এটি কারণ ও প্রভাবের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে, একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের উপর প্রভাবের ফলাফল বর্ণনা করে। পরীক্ষার উদ্দেশ্য ও মাত্রার উপর নির্ভর করে এর প্রক্রিয়ায় পার্থক্য থাকে, তবে প্রতিটি পরীক্ষাই ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ও যৌক্তিক বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করে। একজন শিশু মাধ্যাকর্ষণ বুঝতে সরল পরীক্ষা করে, অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা জটিল অনুসন্ধানের মাধ্যমে ঘটনা বুঝতে বছরব্যাপী পরীক্ষা পরিচালনা করেন।
শিক্ষাঙ্গনে, হাতে-কলমে কার্যক্রমের মাধ্যমে পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ ও নিয়োজন বৃদ্ধি করে। এটি শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক নয়, অনানুষ্ঠানিকও হতে পারে, যেমন কিছু চকলেটের স্বাদ নিয়ে পছন্দেরটি নির্বাচন। অন্যদিকে, অতিপারমাণবিক কণার গবেষণার জন্য জটিল যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের পরীক্ষায় পার্থক্য রয়েছে।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা একটি গবেষণামূলক প্রক্রিয়া, যা প্রতিযোগী ধারণার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে গবেষকরা বিদ্যমান তত্ত্ব যাচাই করেন বা নতুন ধারণা প্রমাণ করেন। একটি পরীক্ষা সাধারণত একটি ধারণা যাচাই করে, কিন্তু ‘কি হবে যদি’ প্রশ্নের উত্তর দিতেও ব্যবহৃত হয়। সতর্কতার সাথে পরিচালিত হলে, ফলাফল ধারণা সমর্থন বা খণ্ডন করে। বিভ্রান্তিকর কারণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকৌশল ও ভৌত বিজ্ঞানে পরীক্ষা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মূল উপাদান। চিকিৎসা ও সামাজিক বিজ্ঞানে এর প্রয়োগ ভিন্ন। ক্লিনিকাল ট্রায়ালে, পরীক্ষামূলক একক(মানুষ) একটি ব্যবস্থায় নিয়োজিত হয় এবং ফলাফল মূল্যায়ন করা হয়। ভৌত বিজ্ঞানে গড় চিকিৎসা প্রভাবের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
কৃষি গবেষণায় দৈব পরীক্ষা ব্যবহৃত হয়। ইবনে আল-হাইসাম আলোকবিজ্ঞানে পরীক্ষা পরিচালনা করেছিলেন এবং স্ব-নিবিড়তা, পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভরতা ও সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি ‘অপটিক্স’ বইতে জ্ঞানের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও গবেষণার বর্ণনা দিয়েছিলেন। ফ্রান্সিস বেকনও পরীক্ষা নির্ভর বিজ্ঞানের প্রারম্ভিক সমর্থক ছিলেন।
গ্যালিলিও গ্যালিলি, অঁতোয়ান লাভোয়াজিয়ে, লুই পাস্তুররা পরীক্ষার ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বিংশ শতাব্দীতে রোনাল্ড ফিশার, জেরী নেমেন, অস্কার কাম্পথর্ন প্রমুখ পরিসংখ্যানবিদ পরীক্ষার গঠন ও বিশ্লেষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
আদর্শ পরীক্ষায় স্বাধীন ও পরাধীন চলক থাকে। নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষায় পরীক্ষামূলক ও নিয়ন্ত্রিত নমুনা তুলনা করা হয়। ওষুধ পরীক্ষা এর একটি উদাহরণ। প্রোটিন ঘনত্ব নির্ণয়ের পরীক্ষা শিক্ষায় একটি উদাহরণ। সকল অবস্থা যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হলে সমতুল্য দল তৈরি করে পরীক্ষা করা হয়। মানুষের পরীক্ষায় প্ল্যাসেবো প্রভাবের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রয়োজন। ডবল অন্ধ পরীক্ষা এতে সাহায্য করে।
পরীক্ষার নকশায় দুই বা ততোধিক ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়। প্রাকৃতিক পরীক্ষা বা আধা-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার ব্যয়বহন কঠিন হলে ব্যবহৃত হয়। ক্ষেত্রের পরীক্ষা পরীক্ষাগারের পরীক্ষা থেকে ভিন্ন। পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা ব্যবহৃত হয় যখন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বা অসম্ভব। পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা পরীক্ষা নয়। মানুষ সম্পৃক্ত পরীক্ষায় নৈতিক বিষয় বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। ম্যানহাটন প্রকল্পের পরীক্ষাও নৈতিক আশঙ্কা তৈরি করে।
বিচারকসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে পরীক্ষামূলক পদ্ধতি কার্যকর। বাংলাদেশে পাবলিক পরীক্ষা ব্যবস্থা ব্রিটিশদের উদ্যোগে চালু হয়েছিল। এসএসসি, এইচএসসি, বিসিএস প্রভৃতি পরীক্ষা উল্লেখযোগ্য। স্যাডলার কমিশন, জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে। গ্রেডিং পদ্ধতি, সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির চালু শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের চেষ্টা।