বাংলাদেশের নদীবন্দর: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
আবহমান কাল ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় নদীবন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। নদীমাতৃক এই দেশে প্রাচীনকাল থেকেই নদীপথ ছিল প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। গ্রিক পন্ডিত টলেমির মানচিত্রে ‘তমলিটিস’ নামে একটি বন্দরনগরীর উল্লেখ পাওয়া যায়, যা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার তমলুক হতে পারে বলে অনুমান করা হয়। সপ্তগ্রাম (সাতগাঁও) ও চট্টগ্রাম বন্দরও প্রাচীনকাল থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইবনে বতুতা ও চীনা পর্যটকদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, তারা চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে নদীপথে সোনারগাঁও বন্দরে এসেছিলেন।
মুঘল আমলে ঢাকা রাজধানী হলে সোনারগাঁও-এর গুরুত্ব কমে যায়। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদী উত্তর ভারত ও আসামের সাথে বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ব্রিটিশ শাসনের পর কলকাতা প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্ব পায় এবং কলকাতা ও হুগলির নৌবন্দরের সাথে যোগাযোগের জন্য নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল, মাদারীপুর, খুলনা, গোয়ালন্দ, সিরাজগঞ্জ ও চিলমারি বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ইন্ডিয়ান জেনারেল নেভিগেশন কোম্পানি ও রিভার স্টিম নেভিগেশন কোম্পানির উদ্যোগে বাষ্পচালিত নৌযান চলাচল শুরু হয়। কালের বিবর্তনে অনেক নদীবন্দর গুরুত্ব হারিয়েছে আবার অনেক নতুন বন্দর গড়ে উঠেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) নদীপথে নৌযান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
বিআইডব্লিউটিএ-এর হিসাবে বাংলাদেশে মোট ২২ টি পূর্ণাঙ্গ নদীবন্দর রয়েছে (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, চাঁদপুর, খুলনা, বাঘাবাড়ী, পটুয়াখালী, নরসিংদী, আরিচা, নগরবাড়ী, দৌলতদিয়া, টঙ্গী, মাওয়া, চর-জান্নাত, আশুগঞ্জ-ভৈরববাজার, ভোলা, বরগুনা, নোয়াপাড়া, মুন্সিগঞ্জ, ছাতক, মেঘনাঘাট ও কক্সবাজার) এবং ৪৪৮ টি ছোট বন্দর (সেকেন্ডারি রিভারাইন স্টেশন)। এছাড়া অন্তত ৩৭৪ টি স্থানে নৌযান থেকে পণ্য ওঠানামা হয়। বিআইডব্লিউটিএ ২৪টি বন্দরে পাইলট স্টেশন স্থাপন করেছে। নদীবন্দরগুলোর উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ অব্যাহত রয়েছে, যাতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এদের ভূমিকা আরও বৃদ্ধি করা যায়।