ঝিকরগাছা: যশোরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের যশোর জেলার অন্তর্গত ঝিকরগাছা উপজেলা ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের অধিকারী। ৩০৭.৯৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা ২৩°০০´ থেকে ২৩°১০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০০´ থেকে ৮৯°১০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে চৌগাছা, দক্ষিণে মনিরামপুর ও কলারোয়া, পূর্বে যশোর সদর ও মনিরামপুর এবং পশ্চিমে শার্শা উপজেলা ঝিকরগাছার সীমান্তবর্তী। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ২৯৮৯০৮ জন, যার মধ্যে পুরুষ ১৪৭১২৭ এবং মহিলা ১৫১৭৮১ জন। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা এখানে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করেন।
কপোতাক্ষ ও বেতনা নদী ঝিকরগাছার প্রধান জলাশয়। খড়মদা বিল, সমুন্দর বিল, বুধখাঁন বিল, টেপরা বিল এবং উজ্জ্বলপুর বাওড় এখানকার উল্লেখযোগ্য বিল। ১৯০৯ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ঝিকরগাছা ১৯৮৩ সালে উপজেলায় উন্নীত হয় এবং ১৯৮৮ সালে পৌরসভা গঠিত হয়।
ঐতিহাসিক দিক থেকে, ঝিকরগাছা বেশ সমৃদ্ধ। দ্বাদশ শতাব্দীর মুকুটরায় রাজার প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ এখনও এখানে দেখা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঝিকরগাছা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাকবাহিনী কৃষ্ণপুরে অসংখ্য মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৫ সেপ্টেম্বর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নের গোয়ালহাটি গ্রামে শহীদ হন। ৬ ডিসেম্বর ঝিকরগাছা শত্রুমুক্ত হয়। গোয়ালহাটিতে একটি বধ্যভূমি এবং একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।
শিক্ষার দিক থেকেও ঝিকরগাছার অগ্রগতি লক্ষণীয়। শহীদ মশিয়ুর রহমান ডিগ্রি কলেজ, এম.এল. হাইস্কুল, রঘুনাথনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বি.এম. হাইস্কুল, গঙ্গানন্দপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঝিকরগাছা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, গাজীর দরগা ফাজিল মাদ্রাসা-সহ অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখানে অবস্থিত। উপজেলার গড় শিক্ষার হার ৫৩%।
কৃষিকাজ ঝিকরগাছার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। ধান, পাট, সরিষা, ডাল, গম, আলু, তুলা, রজনীগন্ধা, সুপারি, শাকসবজি ইত্যাদি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, জাম, পেঁপে, লিচু, নারিকেল, কলা ইত্যাদি ফল এখানে উৎপাদিত হয়। উপজেলার সকল ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন।
ঝিকরগাছার উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য স্থানীয় সরকার প্রশাসন, বিভিন্ন এনজিও (যেমন- ব্র্যাক, আশা, কারিতাস) এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।