জামালপুর সদর

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৭:৫৪ এএম

জামালপুর সদর: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়

জামালপুর সদর, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর জেলার অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক দিয়ে এটি জেলার মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ২৪°৪২´ থেকে ২৪°৫৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫২´ থেকে ৯০°১২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত এই উপজেলার আয়তন প্রায় ৫০৮.৮০ বর্গ কিলোমিটার। উত্তরে শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলা, দক্ষিণে মধুপুর, ধনবাড়ী ও মুক্তাগাছা, পূর্বে মুক্তাগাছা ও ময়মনসিংহ সদর, এবং পশ্চিমে মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলা জামালপুর সদরের সীমানা।

ঐতিহাসিক পরিচয়:

জামালপুর সদরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ১৮৫৩ সালে জামালপুর সদর থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে থানাটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৮৬৯ সালে এখানে পৌরসভা গঠিত হয়। হযরত শাহ্ জামাল (রঃ) এর মাযার, দয়াময়ী মন্দির, এবং রাধানাথ জিউর মন্দির এই উপজেলার উল্লেখযোগ্য প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও জামালপুর সদর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালের বিভিন্ন সময়ে এখানে পাকসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ৯ ডিসেম্বর, পাকবাহিনীর সাথে মুজিব বাহিনী ও মিত্রবাহিনীর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ২৩৫ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ৬১ জন বন্দি হয়। উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত গণকবর, বধ্যভূমি এবং স্মৃতিস্তম্ভ আজও ইতিহাসের সাক্ষী।

জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থা:

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জামালপুর সদরের জনসংখ্যা প্রায় ৬১৫,০৭২। পুরুষ ৩০১,৯১২ এবং মহিলা ৩১৩,১৬০। মুসলিম ৬০৩,২৩০ জন, হিন্দু ১১,৩৩৬ জন, এবং অতি ক্ষুদ্র সংখ্যক বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী বাস করেন। এখানে গারো ও কোচ প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাসও রয়েছে। উপজেলার প্রধান নদী হলো পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, বানার ও মাদারদহ। বামুনজি, শিংগার, চাতাল, বুবিল ও রাওহা বিল উল্লেখযোগ্য জলাশয়।

অর্থনৈতিক কার্যকলাপ:

জামালপুর সদর মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। ধান, পাট, গম, আলু, বেগুন, পিঁয়াজ, রসুন, পান ইত্যাদি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা প্রভৃতি ফল ফলে প্রচুর পরিমাণে। কৃষি ছাড়াও, শিল্প, ব্যবসা, পরিবহন ও যোগাযোগ এখানকার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাসায়নিক শিল্প, সার কারখানা, মসলা শিল্প, চাল কল, তাঁতশিল্প প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। নকশী কাঁথা জামালপুরের একটি বিখ্যাত কুটির শিল্প।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:

জামালপুর সদরের শিক্ষার হার ৪৭%। এখানে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়, ২টি কলেজ, ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এবং ১টি ভোকেশনাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট রয়েছে। জামালপুর জিলা স্কুল, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ, সরকারি জাহেদা সফির মহিলা কলেজ উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যের দিক থেকে, ১টি সরকারি হাসপাতাল, ১টি রেলওয়ে হাসপাতাল, ১০টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, এবং ৬০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা:

জামালপুর সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত উন্নত। ২৫০ কিমি পাকারাস্তা, ১০৩ কিমি আধা-পাকারাস্তা, এবং ৭৪৩ কিমি কাঁচারাস্তা রয়েছে। ৩৫ কিমি নৌপথ এবং ৪৬ কিমি রেলপথ জামালপুর সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সহজ করে তুলেছে।

উপসংহার:

জামালপুর সদর উপজেলা ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, এবং উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। এই উপজেলার আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে আমরা পরবর্তীতে এই লেখাটি আরও সমৃদ্ধ করব।

মূল তথ্যাবলী:

  • জামালপুর সদর উপজেলা ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর জেলার অন্তর্গত।
  • এটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল।
  • মুক্তিযুদ্ধে জামালপুর সদর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা এখানকার অর্থনীতির মূল ভিত্তি।
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।