জহিরুল হক: বাংলাদেশের ফুটবলের এক অমূল্য সম্পদ
৫ জানুয়ারী ১৯৩৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী জহিরুল হক, বাংলাদেশী ফুটবলের ইতিহাসে এক অম্লান স্মৃতি হিসেবে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবেন। ‘জহির’ নামেই সকলে তাকে চিনতেন। রাইট-ব্যাক হিসেবে খেলা জহিরুল হক দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে মোহামেডান ক্লাবের হয়ে অসাধারণ খেলা উপহার দিয়েছেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত মোহামেডানের অধিনায়ক হিসেবে সাতটি প্রথম বিভাগের খেতাব জয় করেছেন, যা কোন ফুটবলারই তুলে ধরতে পারেনি। দুইবার আগা খান গোল্ড কাপ জিতেছেন। পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস কাপে তেরোটি ফাইনাল খেলে চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
১৯৫৪ সালে তেজগাঁও ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাবের মাধ্যমে ঢাকার ফুটবলে যাত্রা শুরু করেন। ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান দলে খেলার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পান। ১৯৬০ সালে পূর্ব পাকিস্তান দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন, যারা প্রথমবারের মতো জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করে। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান জাতীয় দলে অভিষেক হয়। মারদেকা কাপেও খেলেছেন। চীনের স্বাধীনতা দিবস কাপে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেফট্সি পিএফকে-র বিরুদ্ধেও খেলেছেন।
১৯৭২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম ফুটবল খেলায় 'প্রেসিডেন্টস একাদশ'-এর হয়ে খেলেছিলেন। এছাড়াও, বাংলাদেশের স্বাধীনতা উদযাপনের প্রথম 'স্বাধীনতা কাপ' জয়ী মোহামেডান দলে ছিলেন।
২০০১ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার এবং ২০১২ সালে প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছেন। ৬ জানুয়ারী ২০২৪ সালে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বনানী কবরস্থানে তাঁর বাবা নুরুল হকের পাশে দাফন করা হয়।
জহিরুল হক কেবল একজন ফুটবলার ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন প্রেরণার উৎস, একজন কিংবদন্তী, যার অবদান বাংলাদেশী ফুটবলের ইতিহাসে স্থায়ীভাবে লিখিত থাকবে।