চুনতি: বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ইউনিয়নের সমন্বয়
চুনতি নামটি দুটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়: একটি হল চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলায় অবস্থিত চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, অন্যটি হল একই উপজেলার একটি ইউনিয়ন। এই নিবন্ধে উভয় চুনতি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য:
১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই অভয়ারণ্যটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে, চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। ৭,৭৬৪ হেক্টর আয়তনের এই অভয়ারণ্যটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বন্য এশীয় হাতির যাতায়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোর। এখানে বিশালাকায় শতবর্ষী গর্জন গাছসহ প্রায় ১২০০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৭৮ প্রজাতির (পূর্বে) জীবজন্তু ও পাখি (বর্তমানে কিছু প্রজাতি বিলুপ্ত বা বিপন্ন) থাকলেও বন ধ্বংসের কারণে তা কমে আসছে। হাতি, কয়েক ধরনের বিড়াল, বনশূকর, হনুমান ইত্যাদি প্রাণী এখানে দেখা যায়। চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) বন বিভাগের চুনতি রেঞ্জ ও জলদি রেঞ্জ নিয়ে এ অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়েছে। ২০০৩ সালে সাতটি বিট অফিস স্থাপন করা হয়। অভয়ারণ্যটি বন ধ্বংস, জনসংখ্যার চাপ ও অন্যান্য কারণে হুমকির সম্মুখীন।
চুনতি ইউনিয়ন:
চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার অন্তর্গত চুনতি ইউনিয়ন ১৫,১২৮ একর (৬১.২২ বর্গ কিলোমিটার) আয়তনের। ২০০৩ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এর জনসংখ্যা ছিল ৩৩,৪১৫ জন। এটি লোহাগাড়া উপজেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। ১৯৬৮ সালে সাতকানিয়া উপজেলার অংশ হিসেবে চুনতি কার্যক্রম শুরু করে এবং ১৯৮৩ সালে লোহাগাড়া উপজেলার অধীনে আসে। এখানে একটি মহিলা সরকারি কলেজ, কামিল মাদ্রাসা, ফাজিল মাদ্রাসা, দাখিল মাদ্রাসা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবতেদায়ী মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাধ্যমে এখানে সব ধরনের যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়।
উভয় চুনতির অবস্থান:
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও চুনতি ইউনিয়ন উভয়ই লোহাগাড়া উপজেলায় অবস্থিত। তবে অভয়ারণ্যটি ইউনিয়নের ভৌগোলিক এলাকার অংশ হলেও, এটি সুনির্দিষ্ট একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
উপসংহার:
চুনতি নামটি দুটি ভিন্ন, কিন্তু সম্পর্কযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ করে। একটি প্রাকৃতিক সম্পদ, অন্যটি একটি জনবসতিপূর্ণ ইউনিয়ন। উভয়েরই নিজস্ব গুরুত্ব ও অবদান লোহাগাড়া উপজেলার ঐতিহ্য ও উন্নয়নে লক্ষণীয়।