প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক চীন সফর: অর্থনীতি, রাজনীতি ও ভূ-রাজনীতির জটিল সমন্বয়
২০২৩ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর দেশটির অর্থনীতি, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরকালে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সাথে বৈঠক করেন। এই সফরের মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করা, বিশেষ করে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সহায়তা নিশ্চিত করা।
সফরের উল্লেখযোগ্য ঘটনা:
- ২১ টি সমঝোতা স্মারক ও ৭ টি ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর:
* ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার
* বাংলাদেশ থেকে চীনে তাজা আম রফতানি
* অবকাঠামোগত সহযোগিতা জোরদার
* বন্যা নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা
* শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা
* বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু সংস্কার ও নির্মাণ
- চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে চার ধরণের ঋণের আশ্বাস (অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, রেয়াতি ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণ)
- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও মিয়ানমার সংঘাত সমাধানে চীনের সহযোগিতার আশ্বাস
- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি
- বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে ‘সমন্বিত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে’ উন্নীত করা
সফরের গুরুত্ব:
শেখ হাসিনার চীন সফর কেবল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দিকেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ও ভারত, মিয়ানমার, আরও বৃহৎ আন্তর্জাতিক বিতর্কের প্রেক্ষাপটে চীনের সাথে সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে তিস্তা প্রকল্প, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, এবং অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবেলায় চীনের সহায়তার বিষয়গুলি সফরকালে আলোচিত হয়েছে।
বিভিন্ন দিকের বিশ্লেষণ:
অর্থনৈতিক দিক থেকে, সফরের ফলাফল সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে প্রত্যাশিত ঋণ সহায়তা পূর্ণরূপে পাওয়া যায়নি, অন্যদিকে আবার অনেকে মনে করেন ঋণের প্রস্তাব এবং দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার আশ্বাস অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দিক থেকে, ‘সমন্বিত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব’ একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। তবে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের ভারত ও চীনের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
উপসংহার:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। সফরের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সময়ের সাথে সাথে স্পষ্ট হবে।