চিরিরবন্দর

চিরিরবন্দর: দিনাজপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত দিনাজপুর জেলার একটি প্রশাসনিক উপজেলা হল চিরিরবন্দর। চিরির নদীর তীরে অবস্থিত এই উপজেলার নামকরণের পেছনে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে এই নদীর তীরে গড়ে ওঠা একটি ব্যবসায়িক বন্দর। ঐতিহাসিক এই উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, অর্থনীতি এবং ঐতিহাসিক ঘটনা সব মিলিয়ে এটি দিনাজপুর জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা।

  • *ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন:**

চিরিরবন্দর উপজেলার আয়তন ৩১২.৬৯ বর্গ কিলোমিটার। এটি ২৫°৩১´ থেকে ২৫°৪৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪২´ থেকে ৮৮°৫৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে খানসামা ও সৈয়দপুর উপজেলা, দক্ষিণে ফুলবাড়ী উপজেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে পার্বতীপুর উপজেলা এবং পশ্চিমে দিনাজপুর সদর উপজেলা এর সীমান্তবর্তী। ছোট যমুনা ও আত্রাই নদী এই উপজেলার প্রধান জলাশয়।

  • *জনসংখ্যা ও জনগোষ্ঠী:**

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী চিরিরবন্দর উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ২৯২,৫০০। এর মধ্যে পুরুষ ১৪৬,৬১৯ এবং মহিলা ১৪৫,৮৮১। এখানে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে এখানে সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীরও বসবাস রয়েছে।

  • *অর্থনীতি:**

চিরিরবন্দরের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম, আখ, আলু, ডাল, তৈলবীজ ইত্যাদি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। এছাড়াও লিচু, আম, কলা, কাঁঠাল ইত্যাদি ফলের চাষাবাদ হয়। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও এখানে রয়েছে। রাইস মিল, হাসকিং মিল, স‘মিল, অয়েল মিল ইত্যাদি কলকারখানাও চালু আছে। স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প ইত্যাদি কুটিরশিল্পও এখানকার অর্থনীতিতে অবদান রাখে।

  • *শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:**

চিরিরবন্দরের শিক্ষার হার ৫২.৯%। এখানে ৯টি কলেজ, ৭৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৮৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৩৯টি মাদ্রাসা রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য রয়েছে একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং ২টি স্যাটেলাইট ক্লিনিক।

  • *ঐতিহাসিক ঘটনা:**

১৯৪৭ সালের ৪ জানুয়ারি তেভাগা আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ সৈন্যদের গুলিতে মুসলিম বর্গাদার সমির উদ্দিন ও সাঁওতাল শিবুরাম মাঝি নিহত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও এই উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রানী বন্দর জে.বি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি ও গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। বারদুয়ারী মসজিদ এখানকার একটি প্রাচীন নিদর্শন।

  • *প্রশাসন:**

১৯১৪ সালে চিরিরবন্দর থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে এটি ১২টি ইউনিয়নে বিভক্ত।

চিরিরবন্দর উপজেলা দিনাজপুর জেলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক। এর ভৌগোলিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা একে দিনাজপুর জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তুলেছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • চিরিরবন্দর দিনাজপুর জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা।
  • চিরির নদীর তীরে অবস্থিত এ উপজেলার আয়তন ৩১২.৬৯ বর্গ কিলোমিটার।
  • ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা প্রায় ২৯২,৫০০।
  • মূলত কৃষি নির্ভর অর্থনীতি।
  • ১৯৪৭ সালের তেভাগা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
  • ১৯১৪ সালে থানা, ১৯৮৪ সালে উপজেলায় রূপান্তর।

গণমাধ্যমে - চিরিরবন্দর

২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

চিরিরবন্দরে আলুর ভালো ফলন হয়েছে।