খানসামা: দিনাজপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত খানসামা উপজেলা তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব, ভৌগোলিক সৌন্দর্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পরিচিত। ১৭৯.৭২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা ২৫°৪৭´ থেকে ২৬°০১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪২´ থেকে ৮৮°৫১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে দেবীগঞ্জ ও নীলফামারী সদর, দক্ষিণে চিরিরবন্দর ও দিনাজপুর সদর, পূর্বে নীলফামারী সদর এবং পশ্চিমে কাহারোল ও বীরগঞ্জ উপজেলা দ্বারা খানসামা বেষ্টিত।
জনসংখ্যা ও গোষ্ঠীগত বৈচিত্র্য:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী খানসামার জনসংখ্যা ১৭১৭৬৪; যার মধ্যে পুরুষ ৮৬৭৩১ এবং মহিলা ৮৫০৩৩। মুসলিম ১২৩৫৪৭, হিন্দু ৪৭৫৭৩, খ্রিস্টান ৪৫৭ এবং অন্যান্য ১৮৭। এখানে সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীরও বসবাস রয়েছে।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও জলবায়ু:
আত্রাই, করতোয়া ও ছোট যমুনা নদী খানসামার প্রধান জলাশয়। উর্বর মাটি এবং উপযুক্ত জলবায়ু কৃষিকাজের জন্য অনুকূল।
প্রশাসনিক ইতিহাস:
খানসামা থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯১ সালে। ১৯৮৩ সালে এটিকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
ঐতিহাসিক নিদর্শন:
আওকর মসজিদ (১১৭৮ খ্রিস্টাব্দ), চেহেল গাজীর মাযার এবং নলবাড়ির মাযার খানসামার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।
মুক্তিযুদ্ধের অবদান:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে খানসামা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের পাকবাহিনীর সাথে তীব্র যুদ্ধ হয়। ইছামতি নদীর ঘাটমারা নামক স্থানে সংঘটিত একটি যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৪ ডিসেম্বর উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।
অর্থনীতি ও উন্নয়ন:
খানসামার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, আখ, আলু, ভুট্টা প্রধান কৃষি ফসল। তরমুজ ও কলা প্রধান রপ্তানিদ্রব্য। তেল কল, রাইস মিল, আইস ফ্যাক্টরি, বিস্কুট ফ্যাক্টরি উল্লেখযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান। কুটির শিল্পের মধ্যে তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, স্বর্ণশিল্প, কাঠের কাজ উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
শিক্ষার হার ৪৭.৫%। কলেজ ১১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৯ এবং মাদ্রাসা ২৬। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫, স্যাটেলাইট ক্লিনিক ১।
যোগাযোগ:
পাকা রাস্তা ৩১.৫ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৪৬.২ কিমি এবং নৌপথ ৩৮.৪ কিমি।
সারসংক্ষেপে:
খানসামা উপজেলা ঐতিহাসিক গুরুত্ব, কৃষি সম্পদ এবং উন্নয়নের সম্ভাবনার জন্য পরিচিত। এটি দিনাজপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।