চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা: একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ
চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা, ২২°০২´ থেকে ২২°০৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৪৯´ থেকে ৯২°০৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে ২০১.৯৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। উত্তরে পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়া, দক্ষিণে সাতকানিয়া, পূর্বে বান্দরবান সদর ও সাতকানিয়া, এবং পশ্চিমে আনোয়ারা উপজেলা দ্বারা সীমাবদ্ধ। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যা ছিল ২৩৩০১৭, যার মধ্যে পুরুষ ১১৭৪১৮ এবং মহিলা ১১৫৫৯৯। ধর্মীয়ভাবে, মুসলিম ২০০০৭২, হিন্দু ২৭১৬২, বৌদ্ধ ৫০৪৬, খ্রিস্টান ৫৬৪ এবং অন্যান্য ১৭৩।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
চন্দনাইশের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ১৬৬৬ সালে মুগল বাহিনী উত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল দখল করে। মোর্তজা খাঁর নেতৃত্বে মুগল বাহিনী কর্ণফুলি নদী পার হয়ে শঙ্খ নদীর উত্তর তীরে অবস্থান নেয়। দুইজন হাজারী মনসবদারের নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম হয় দোহাজারী। ব্রিটিশরা দোহাজারীতে একটি বিমান ঘাটি নির্মাণ করে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দোহাজারীতে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয়, এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চট্টগ্রাম শহর থেকে দোহাজারীতে স্থানান্তরিত হয়। উপজেলায় দুটি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য:
চন্দনাইশ উপজেলার প্রধান নদী সাঙ্গু। পাকা রাস্তা ৮১ কিমি, আধা-পাকা রাস্তা ১৪১ কিমি এবং কাঁচা রাস্তা ২০২ কিমি। নৌপথ ৫ কিমি এবং রেলপথ ২০ কিমি; তিনটি রেলস্টেশন (দোহাজারী, হাশিমপুর, গাছবাড়ীয়া খান হাট)। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে সাদা মাটি ও বিভিন্ন ধরনের পাথর উল্লেখযোগ্য।
অর্থনীতি:
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি (৩৬.৪১%), ব্যবসা (১৯.১১%), চাকরি (১৬%), এবং অন্যান্য। প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আখ, আলু, মরিচ, সরিষা, এবং শাকসবজি। বিখ্যাত ফল-ফলাদি কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, এবং লেবু। শিল্প ও কলকারখানার মধ্যে গার্মেন্টস, হিমাগার, বরফকল, প্রিন্টিং প্রেস, এবং ধানকল উল্লেখযোগ্য। কুটিরশিল্পের মধ্যে স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, এবং তাঁতশিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
শিক্ষার হার ৫৩.৬%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গাছবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ, সাতবাড়িয়া কলেজ, আমানতছফা বদরুন্নেছা মহিলা কলেজ, জামিজুরী কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, এবং কমিউনিটি ক্লিনিক ১০।
সংস্কৃতি:
চন্দনাইশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাতবাড়িয়া শাস্তি বিহার ও গাছবাড়িয়া সার্বজনীন হরি মন্দির। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লাইব্রেরি ৯, ক্লাব ২০, প্রেস ক্লাব ২, সিনেমা হল ২, এবং স্টেডিয়াম ১।
উপসংহার:
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, ভৌগোলিক সৌন্দর্য, অর্থনৈতিক কার্যকলাপ, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য উল্লেখযোগ্য। এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল যা ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বহন করে।