গ্রামীণ সংস্কৃতি

আপডেট: ৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:০৬ এএম

বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতি: একটি বহুমুখী চিত্র

বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল হলেও, গ্রামীণ কাঠামোর পরিবর্তন একই গতিতে হচ্ছে না। ড. তোফায়েল আহমদের 'আমার গ্রাম রূপান্তরের রেখচিত্র' এ বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। বাংলাদেশকে একসময় 'বৃহৎ গ্রাম' বলা হলেও, এখন শহুরে রূপ ধারণ করছে। শহরগুলো পরস্পরের সাথে জড়িত হচ্ছে, কিন্তু এ উন্নয়ন কতটুকু সত্যিকারের উন্নয়ন তা পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।

গ্রামীণ জীবনে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রজন্মের তুলনায়, বর্তমান প্রজন্মের জীবনযাত্রার মানে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তীতে পাট ও ধান ছিল গ্রামীণ অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। নব্বইয়ের দশক থেকে কৃষি বিপ্লব গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।

মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির কথাও উল্লেখ্য। একসময় মাছ দুর্লভ ছিল, এখন বাংলাদেশ চতুর্থ বৃহৎ মৎস্য উৎপাদনকারী দেশ। মাছের দামও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। 'মাছ পাড়া' সম্প্রদায়ের একচেটিয়া ব্যবসায় এখন শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকলেই জড়িত। ডিমের ক্ষেত্রেও একই পরিবর্তন লক্ষণীয়। বাংলাদেশ এখন নিজের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। গ্রামে ছোট-বড় মুরগির খামার ও মৎস্য প্রকল্প বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহিলারা হাঁস-মুরগি, শাক-সবজি ও গরু পালনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন।

বাজার ব্যবস্থাপনায়ও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আগে নির্দিষ্ট দিনে বাজার বসত, এখন প্রতিদিন। গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, ছোট-বড় কল-কারখানা গড়ে উঠেছে, প্রায় প্রতিটি পরিবারে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। বহু গ্রামীণ পরিবারের সদস্য বিদেশে কর্মরত, ভূমিহীন ও শ্রমজীবীদেরও কাজের মূল্য আছে।

করোনা মহামারীর সময় ঢাকা থেকে প্রায় তিন মিলিয়ন মানুষ গ্রামে ফিরে গেলেও, গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের চেয়ে ইতিবাচক প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা গেছে। গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হলেও, যুবসমাজের দিকনির্দেশনার অভাব চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যমান। প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও, অশ্লীল ও নৈতিকভাবে ক্ষতিকর ব্যবহারও লক্ষণীয়।

আগে গ্রামে ব্যাপকভাবে সামাজিক অনুষ্ঠান হত, যুবসমাজ সক্রিয় ভূমিকা পালন করত। এখন জাতীয় রাজনীতির প্রভাব গ্রামীণ সমাজকে বিভক্ত করছে। উন্নয়ন হলেও, তা সুষম নয়, দুর্নীতি ও রাজনীতির নামে অনেকে দ্রুত ধনী হচ্ছে। জনসম্পৃক্ততা ও দক্ষ, সৎ মানুষ তৈরির মাধ্যমে গ্রামকে সমৃদ্ধ করা যায়। বঙ্গবন্ধুর সমবায় গ্রাম ও জিয়াউর রহমানের গ্রাম সরকারের ধারণা এখানে প্রাসঙ্গিক। গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষার কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

গ্রামীণ ট্যুরিজম একটি নতুন বিকল্প। গ্রামীণ পরিবেশে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থায় শহরবাসী আকৃষ্ট হচ্ছে। তবে এসব উন্নয়নের বিপরীতে কালোমেঘও জমছে। গ্রামীণ পরিবেশ ও মর্যাদা ক্রমশ ক্ষুন্ন হচ্ছে। ইবনে খালদুনের সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা বর্তমান গ্রামীণ কাঠামোর উপর প্রযোজ্য। গ্রামীণ কাঠামো এখন ভালো-খারাপের সংমিশ্রণ। জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি ও পরস্পরের যোগাযোগ নগরায়ণের সূচনা করেছে। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে শহরের চেয়ে গ্রামীণ অর্থনীতি বেশি শক্তিশালী হয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে।
  • কৃষি বিপ্লব গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
  • মাছ ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • গ্রামীণ বাজার ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এসেছে।
  • প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও, নৈতিক অবক্ষয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
  • গ্রামীণ ট্যুরিজম একটি নতুন সুযোগ।
  • গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষা করা জরুরী।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।