গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৬:৪৬ এএম
নামান্তরে:
Gobindaganj Upazila
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত এই উপজেলাটির অবস্থান ২৫°০৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। ৪৬০.৪২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটির উত্তরে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট ও পলাশবাড়ী উপজেলা, দক্ষিণে বগুড়া জেলার সোনাতলা ও শিবগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে সাঘাটা ও পলাশবাড়ী উপজেলা এবং পশ্চিমে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি ও কালাই উপজেলা অবস্থিত। উপজেলার এক-চতুর্থাংশ এলাকা বরেন্দ্রভূমির অন্তর্ভুক্ত।

জনসংখ্যা ও ভূগোল:

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার জনসংখ্যা ছিল ৫১৪,৬৯৬; যার মধ্যে পুরুষ ২৫৫,৬৩৯ এবং মহিলা ২৫৯,০৫৭। মুসলিম ৪৭৭,৭২৭, হিন্দু ৩২,৮৩৯, খ্রিস্টান ২,৭৯৭ এবং অন্যান্য ১,৩৩২। এখানে সাঁওতাল, মারান্ডি প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। উপজেলায় করতোয়া, বাঙ্গালী, নলুয়া নদী এবং সাত বিল উল্লেখযোগ্য জলাশয়।

অর্থনীতি ও কৃষি:

গোবিন্দগঞ্জের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। প্রধান কৃষি ফসলের মধ্যে ধান, পাট, ভুট্টা, আখ, গম, আলু, সরিষা, পিঁয়াজ, মরিচ, রসুন এবং বিভিন্ন শাকসবজি উল্লেখযোগ্য। কোচাশহর ইউনিয়ন কুটির শিল্পের জন্য বিখ্যাত; এখানে ১৯৬০-এর দশক থেকে সুয়েটার, মুজা, মাফলার ইত্যাদি তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ চিনিকল রংপুর চিনি কল লিমিটেড এই উপজেলার মহিমাগঞ্জে অবস্থিত। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ভূমিকা পালন করে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শিক্ষার হার ৪২.৬%; পুরুষ ৪৫.৮% এবং মহিলা ৩৯.৫%। এখানে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে কলেজ, কারিগরি কলেজ, আইন কলেজ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা উল্লেখযোগ্য। গোবিন্দগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত) উল্লেখযোগ্য একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

ঐতিহাসিক ঘটনা ও দর্শনীয় স্থান:

গোবিন্দগঞ্জের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে উপজেলাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২৭ মার্চ ১৯৭১ সালে করতোয়া নদীর উপর কাটাখালি ব্রিজ ধ্বংসের চেষ্টাকালে পাকসেনার গুলিতে ৭ জন নিহত হয়েছিলেন। ত্রিমোহিনীতে মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। দর্শনীয় স্থানের মধ্যে বর্ধনকুঠি জমিদার বাড়ি, কামদিয়ার বিরাট নগর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

যোগাযোগ:

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাথে পাকা, আধা-পাকা ও কাঁচা রাস্তার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও ১২ কিলোমিটার রেলপথও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহায়তা করে।

অন্যান্য তথ্য:

উপজেলার সকল ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন, তবে ৩২.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। পানীয়জলের প্রধান উৎস নলকূপ। স্যানিটেশন ব্যবস্থা সীমিত। ব্র্যাক, আশা, স্বনির্ভর, ঠেংগামারা মহিলা সবুজ সংঘ প্রভৃতি এনজিও গুলি উপজেলায় কাজ করে।

মূল তথ্যাবলী:

  • গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলায় অবস্থিত।
  • এটি উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত।
  • উপজেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি ও কুটির শিল্পের উপর নির্ভরশীল।
  • মুক্তিযুদ্ধে গোবিন্দগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
  • এখানে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।