বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও গুলি চালানোর ঘটনা: একটি বিশ্লেষণ
২০২৩ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যেখানে পুলিশের গুলিবর্ষণে বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়। এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা গুলি চালানোর ঘটনার তদন্ত শুরু করে এবং অন্তত ৭৪৭ জন পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করে।
ঘটনার বিবরণ:
১৮ থেকে ২১ জুলাই চার দিনব্যাপী এই আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে। পুলিশের ৩৫৭ জন সদস্য প্রায় ৮,০০০ টি প্রাণঘাতী গুলি করে, যার ফলে অনেক বিক্ষোভকারী নিহত এবং কয়েক শত আহত হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৭৫৪ সদস্য অন্তত ২৬,০২৩ টি গুলি, রাবার বুলেট এবং অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করেন। এর মধ্যে শটগানের শিসা কার্তুজ, চীনের সেভেন পয়েন্ট সিক্সটু এমএম, এসএমজি, টরাস নাইন এমএম এবং অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি, পিস্তলের গুলি, রাবার বুলেট, হ্যান্ড গ্রেনেড, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার গ্রেনেড ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রাণঘাতী গুলি ছিল ১৬,৯১২ টি। প্রায় ১৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন থানায় অন্তত ১১৫ টি মামলা হয়।
তদন্ত ও তথ্য:
'লয়ার ফর এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট' নামের আইনজীবীদের একটি সংগঠন পুলিশের ১০০টি মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থাকে সাবেক জুলাইয়ের ঘটনার সময় গুলি চালানো পুলিশ সদস্যদের তালিকা প্রদান করে। তদন্তে পুলিশের ৭৪৭ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে যারা কনস্টেবল থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পর্যন্ত পদমর্যাদার কর্মকর্তা। বাকি ১৪ জন ছিলেন পুলিশের নায়েব, সুবেদার ও চালক। গুলি করার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হয়নি। গুলি করার নির্দেশদাতা বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
রংপুরে গুলি চালানো:
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর অভিযোগে তৎকালীন পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। ১৯ জুলাই রংপুর সিটি বাজারে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জন আহত হয়। সারজিস আলম এবং ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি সহ অনেকে এই ঘটনার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। এছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ১ কোটি চল্লিশ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
পুলিশের বক্তব্য:
পুলিশের দাবি, আত্মরক্ষার্থে গুলি করা হয়েছে। তবে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণে পুলিশ প্রবিধানের ১৫৩ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০২ ধারা অনুযায়ী নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিচার প্রক্রিয়া:
জুলাই-আগস্টের গণহত্যার অভিযোগে পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। তবে আন্দোলন দমনে গুলি চালানোর নির্দেশদাতা সহ অনেকের বিচারের প্রক্রিয়া চলমান।
উল্লেখ্য: এই ঘটনায় আরও তথ্য প্রকাশিত হলে আর্টিকেলটি আপডেট করা হবে।