খাদ্য: জীবনের মূল ভিত্তি
মানুষের অস্তিত্বের জন্য খাদ্য এক অপরিহার্য উপাদান। শুধুমাত্র প্রাণ ধারণই নয়, সুস্থ ও সবল থাকার জন্য, বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য, মানসিক ও শারীরিক কর্মক্ষমতা বজায় রাখার জন্য খাদ্য অপরিহার্য। আমরা যেসব বস্তু খাই তাকে আহার্য বলা হলেও সব আহার্যই খাদ্য নয়। দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং তাপশক্তি উৎপাদনে ভূমিকা পালন করে এমন আহার্যকেই খাদ্য বলে।
খাদ্যের উপাদান:
খাদ্য ছয়টি প্রধান উপাদানে বিভক্ত: কার্বোহাইড্রেট (শর্করা), প্রোটিন (আমিষ), লিপিড (স্নেহপদার্থ), ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং জল। কার্বোহাইড্রেট দেহের প্রধান শক্তির উৎস, প্রোটিন দেহের বৃদ্ধি ও মেরামতে ভূমিকা পালন করে, লিপিড তাপ নিয়ন্ত্রণ ও শক্তি সঞ্চয়ে সাহায্য করে। ভিটামিন ও খনিজ লবণ দেহের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জল দেহের সকল জৈবিক কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা:
খাদ্য ব্যবস্থাপনার স্থায়িত্ব, জৈবিক বৈচিত্র্য, অর্থনীতি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পানি সরবরাহ, এবং খাদ্য নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সাথে জড়িত। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP), খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO), এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা খাদ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ওপর নজর রাখে। বাংলাদেশেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যেমন কাজের বিনিময়ে খাদ্য (Food for Work) কর্মসূচি, ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (VGD) কর্মসূচি। আধুনিক খাদ্য প্রযুক্তি, যেমন বিকিরণ প্রযুক্তির ব্যবহার, খাদ্য সংরক্ষণ ও পুষ্টিমান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
খাদ্যের শ্রেণীবিভাগ:
খাদ্যকে বিভিন্ন ভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়, যেমন: উৎস অনুসারে (উদ্ভিদজাত, প্রাণীজাত), পুষ্টি উপাদান অনুসারে (শর্করা, প্রোটিন, লিপিড), প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি অনুসারে (কাঁচা, প্রক্রিয়াজাত)। কার্যকরী খাদ্য (Functional Food) এমন খাদ্য যা পুষ্টির পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্য আরো অতিরিক্ত উপকারী উপাদান ধারণ করে।
খাদ্য নিরাপত্তা ও মান:
দূষিত খাদ্য গ্রহণ বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। খাদ্যের উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বিতরণের প্রতিটি ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। বাংলাদেশে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৫৯, বিভিন্ন বিধিমালা এবং বিএসটিআই এর মান নির্ধারণ খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে। সরকার, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।