মীর কাসেম আলী (৩১ ডিসেম্বর ১৯৫২ - ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬) বাংলাদেশের একজন বিতর্কিত ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, এবং জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের অন্যতম নেতা ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন। ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মীর কাসেম আলী ১৯৫২ সালের ৩১শে ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামে তৈয়ব আলী ও রাবেয়া বেগমের দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৮-১৯৬২ সাল পর্যন্ত বরিশালের আদর্শ বিদ্যালয়ে, এবং ১৯৬৩-১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ফরিদপুর জেলা স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। তিনি চট্টগ্রাম কলেজে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হলেও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় লেখাপড়া অসম্পূর্ণ রেখে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ (পাশ) এবং ১৯৭৭ সালে অর্থনীতিতে এমএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
মীর কাসেম আলী ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালক ছিলেন। তিনি দিগন্ত মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন, যা দৈনিক নয়া দিগন্ত এবং দিগন্ত টেলিভিশন পরিচালনা করে। এছাড়াও তিনি ইবনে সিনা ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা এবং ইবনে সিনা হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি 'রাবেতা আল-আলম আল ইসলামী' (সৌদি আরবে প্রতিষ্ঠিত একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও দাতব্য সংগঠন) এর এদেশীয় পরিচালক ছিলেন। এর বাইরে, তিনি আরও ৪০টি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম ছাত্র সংঘের সভাপতি ও চট্টগ্রাম শহর শাখা ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি স্বাধীনতার পর সৌদি আরবে পালিয়ে যান এবং পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে দেশে ফিরে আসেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্র সংঘের পরিবর্তিত রূপ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রথম সভাপতি ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় অনুসারে, মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালে আল-বদর বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও জামায়াতে ইসলামীর অর্থায়নে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ২০০৯ সালের গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি কারাবন্দী ছিলেন এবং আর কখনো মুক্তি পাননি।