কামারখন্দ: সিরাজগঞ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলা ৯০.৮০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের অধিকারী। ২৪°১৮´ থেকে ২৪°২৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৫´ থেকে ৮৯°৪২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত এ উপজেলা উত্তরে সিরাজগঞ্জ সদর ও রায়গঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে বেলকুচি উপজেলা, পূর্বে বেলকুচি ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে উল্লাপাড়া উপজেলার সীমানা দ্বারা বেষ্টিত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, কামারখন্দের জনসংখ্যা ১৩৮৬৪৫; যার মধ্যে পুরুষ ৬৮৪১১ এবং মহিলা ৭০২৩৪। ধর্মীয়ভাবে, ১৩৩১৪১ জন মুসলিম, ৫৪৯৪ জন হিন্দু, ৭ জন খ্রিস্টান এবং ৩ জন অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।
ঐতিহাসিক ঘটনা ও প্রশাসন:
১৯০৯ সালে কামারখন্দ থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কামারখন্দের ভদ্রঘাট ইউনিয়নের কালীবাড়ীতে পলাশডাঙ্গা যুব শিবির গঠিত হয়েছিল, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৭ জুন ভদ্রঘাট গ্রামে পাকিস্তানি সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ঝাঐল ব্রিজেও মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ হয়েছিল। এছাড়াও, ১৮৮৫ ও ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প এবং ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ কামারখন্দকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।
অর্থনীতি ও উন্নয়ন:
কামারখন্দের অর্থনীতি প্রধানত কৃষি নির্ভর। কৃষিকাজের পাশাপাশি ব্যবসা, চাকুরী, শিল্প এবং পরিবহন ও যোগাযোগের উপরও জনগোষ্ঠীর আয় নির্ভর করে। উল্লেখযোগ্য কৃষি ফসলের মধ্যে ধান, গম, পাট, আখ, সরিষা এবং শাকসবজি উল্লেখযোগ্য। আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে এবং কুল প্রধান ফল-ফলাদি। ধানকল, বরফকল প্রধান শিল্প এবং তাঁতশিল্প, বাঁশের কাজ, মৃৎশিল্প, বেতের কাজ ও বুননশিল্প উল্লেখযোগ্য কুটিরশিল্প। কামারখন্দের প্রধান রপ্তানিদ্রব্য গুড়, সরিষা, শাকসবজি, বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্র।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
শিক্ষার হার ৪৬.২% (পুরুষ ৪৮.৯%, মহিলা ৪৩.৭%)। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে হাজী কোরপ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ, কামারখন্দ মহিলা ডিগ্রি কলেজ, ধোপাকান্দি বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়, ধোপাকান্দি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং কামারখন্দ সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা। এছাড়াও রয়েছে একাধিক মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা। স্বাস্থ্য সেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র কাজ করছে।
যোগাযোগ ও অবকাঠামো:
কামারখন্দের যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে ৯৪ কিমি পাকারাস্তা, ৫ কিমি আধা-পাকারাস্তা, ৭২ কিমি কাঁচারাস্তা এবং ১৪ কিমি রেলপথ। নদীপথ ৪.৫৮ নটিক্যাল মাইল। ৮৫ টি সেতু এবং ৯৭ টি কালভার্ট রয়েছে। একটি রেল স্টেশন রয়েছে। উল্লেখযোগ্য বাজারের মধ্যে রয়েছে জামতৈল বাজার, কামারখন্দ বাজার, ভদ্রঘাট বাজার, বড়ধুল হাট, এবং বলরামপুর হাট।