কবিরহাট: নোয়াখালীর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা হল কবিরহাট। এটি নোয়াখালী জেলার একটি উল্লেখযোগ্য উপজেলা, যার সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ভৌগোলিক সৌন্দর্য রয়েছে। ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট নোয়াখালী সদর উপজেলার অংশ বিশেষ নিয়ে কবিরহাট উপজেলা সৃষ্টি করা হয়। ১৮৫.২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ১৯৬৯৪৪ (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)। পুরুষ ও নারীর অনুপাত প্রায় সমান। মুসলিম অধিবাসী সংখ্যাগরিষ্ঠ।
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
কবিরহাট উপজেলার অবস্থান ২২°৪৪´ থেকে ২২°৫৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০৮´ থেকে ৯১°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে বেগমগঞ্জ ও সেনবাগ উপজেলা, দক্ষিণে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিমে নোয়াখালী সদর উপজেলা অবস্থিত। নোয়াখালী খাল এই উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাশয়। উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নদী-নালায় ভরা পরিবেশ এটিকে অতুলনীয় করে তুলেছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
কবিরহাটের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। মুগল আমলের কবির পাটোয়ারী জামে মসজিদ (ঘোষবাগ গ্রাম), তিন গম্বুজ বিশিষ্ট হৈয়া মিয়া মসজিদ এবং ছনখোলা দরবেশের (র.) মাযার (নরোত্তমপুর ইউনিয়ন) এই অঞ্চলের ঐতিহ্যের সাক্ষী। মুক্তিযুদ্ধের সময় উপজেলার কবিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকাররা তাদের ক্যাম্প স্থাপন করেছিল। বিভিন্ন যুদ্ধ ও সংঘর্ষের ঘটনাও কবিরহাটের ইতিহাসের অংশ।
অর্থনীতি ও জনজীবন:
কবিরহাটের অর্থনীতি প্রধানত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, ডাল ও বিভিন্ন শাকসবজি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। আম, জাম, তাল, খেজুর, নারিকেল ও সুপারি এখানকার প্রধান ফল-ফলাদি। কবির হাট, চাপরাশির হাট, কালীর হাট, ভূঞার হাট, মিয়ার হাট এবং করম বাজার উপজেলার উল্লেখযোগ্য হাটবাজার। শিক্ষার হার যদিও ৪৯.০% (পুরুষ ৪৮.৮%, মহিলা ৪৯.২%), তবুও কবিরহাট সরকারি কলেজ, চাপরাশির হাট উচ্চ বিদ্যালয়, কবিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, চাপরাশির হাট মাদ্রাসা, কবিরহাট মাদ্রাসা সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
প্রশাসন ও উন্নয়ন:
৯টি ওয়ার্ড ও ১১টি মহল্লায় বিভক্ত কবিরহাট পৌরসভা শহরের নাগরিকদের পৌরসেবা প্রদান করে। যদিও পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতায় এ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ আছে, পানীয়জলের উৎস প্রধানত নলকূপ, তবে অনেক নলকূপে আর্সেনিকের উপস্থিতি একটি উদ্বেগের বিষয়। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য একটি হাসপাতাল এবং ৯টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর এবং ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘুর্ণিঝড় ও বন্যায় উপজেলার ব্যাপক ক্ষতি হয়। এনআরডিএস সহ বিভিন্ন এনজিও এখানে উন্নয়নমূলক কাজে নিয়োজিত।