কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর: বঙ্গোপসাগরের কোলে অবস্থিত এই সমুদ্রবন্দরটি কেবলমাত্র একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য্যে পরিপূর্ণ এই অঞ্চলটি বহু যুগ ধরে বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে। ইংরেজ ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামানুসারে এর নামকরণ হয় কক্সবাজার। এটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগে অবস্থিত এবং পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত।
ঐতিহাসিক দিক থেকে, অষ্টম শতাব্দী থেকেই আরব বণিক ও ধর্মপ্রচারকদের আগমনের সাথে কক্সবাজারের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। নবম শতাব্দীতে এটি হরিকেলের রাজা কান্তিদেবের শাসনাধীন ছিল। পরবর্তীতে আরাকান রাজ্যের অধীনে অন্তর্ভুক্ত হলেও, মুগলদের আমলে চট্টগ্রাম অধিকারের পর কক্সবাজারের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। বর্মীদের অত্যাচার থেকে পালিয়ে আসা আরাকানী উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের অবদান উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধেও কক্সবাজারের গুরুত্ব ছিল। পাকবাহিনীর নৃশংসতা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা এই অঞ্চলের ইতিহাসের অংশ।
ভৌগোলিকভাবে, কক্সবাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পাহাড়ি সারি, সমুদ্রতট ও সমুদ্র মাঝে অবস্থিত মহেশখালী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া, সেন্ট মার্টিনস প্রভৃতি দ্বীপপুঞ্জের জন্য বিখ্যাত। এই সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সমুদ্রতটে অসংখ্য কটেজ, মোটেল, হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। হিমছড়ি, রামু, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিনস ইত্যাদি পর্যটন স্থান কক্সবাজারের আকর্ষণ বৃদ্ধি করেছে।
অর্থনৈতিকভাবে, কক্সবাজার কৃষি, মৎস্য, পান, সুপারি, কাঠ, চিংড়ি, শুঁটকি মাছ ইত্যাদির রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনৈতিক অবদান রাখে। পর্যটন খাত কক্সবাজারের অর্থনীতির একটি প্রধান অংশ। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কক্সবাজারের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।