উত্তরবঙ্গ: বাংলাদেশ ও ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক অঞ্চল
উত্তরবঙ্গ বলতে সাধারণত বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশকে বোঝায়। বাংলাদেশের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ এবং ভারতের জলপাইগুড়ি ও মালদহ বিভাগ এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। গঙ্গা নদী দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গকে পৃথক করেছে। ঐতিহাসিকভাবে, উত্তরবঙ্গ প্রাচীন বাংলার কয়েকটি রাজধানীর আবাসস্থল ছিল। পুন্ড্রনগর (বগুড়া), গৌড় (মালদহ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকা) এবং নাটোর উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থান। রাজা বরেন্দ্র সেনের রাজ্য 'বরেন্দ্র' এই অঞ্চলে অবস্থিত ছিল বলে পৌরাণিক কাহিনীতে উল্লেখ আছে। রংপুর ও কোচবিহার একসময় কামরূপের অংশ ছিল।
ভৌগোলিকভাবে, উত্তরবঙ্গ তিস্তা, তোর্ষা, জলঢাকা, রায়ডাক, মহানন্দা প্রভৃতি নদ-নদী সমৃদ্ধ। দার্জিলিং পর্বতমালা ও ডুয়ার্স সমভূমি এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বর্ধিত করেছে। উত্তরবঙ্গের অর্থনীতি মূলত কৃষিকর্মের উপর নির্ভরশীল। তবে, পর্যটন শিল্প, বিশেষ করে ভারতের উত্তরবঙ্গে (দার্জিলিং, শিলিগুড়ি) উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
জনসংখ্যার দিক থেকে, ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে প্রায় ৩ কোটি মানুষ বাস করে, যারা প্রধানত মুসলমান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ভারতের উত্তরবঙ্গে প্রায় ১.৭ কোটি মানুষ বাস করে, যারা প্রধানত হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মোট ১৬টি জেলা নিয়ে গঠিত, রাজশাহীকে প্রধান শহর এবং বগুড়াকে প্রবেশদ্বার বলা হয়। ভারতের উত্তরবঙ্গ জলপাইগুড়ি ও মালদহ বিভাগের ৮টি জেলা নিয়ে গঠিত; শিলিগুড়ি এখানকার প্রধান শহর।
উত্তরবঙ্গের কথ্য ভাষার মধ্যে বরেন্দ্রী ও কামতাপুরী উল্লেখযোগ্য। উত্তরবঙ্গ সাহিত্য সম্মিলনীর মতো সংগঠনও এ অঞ্চলের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে।