রংপুর অঞ্চলে আলুবীজের সংকট: কৃষকদের উদ্বেগ
বাংলাদেশে আলু একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য এবং অর্থকরী ফসল। বিশ্বের প্রায় ৪০ টি দেশে আলু মানুষের প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং অনেক দেশে পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছে। তবে, সম্প্রতি রংপুর অঞ্চলে আলুবীজের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে যা কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
সরকারি বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) থেকে রংপুর অঞ্চলে আলুবীজের বরাদ্দ ক্রমশ কমছে। গত ছয় বছরে আলুবীজের বরাদ্দ কমেছে প্রায় ১ হাজার ৪২৮.৭৫৯ টন। এই সময়কালে রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা এবং কুড়িগ্রাম এই পাঁচ জেলায় আলু চাষের জমি বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার ২০২ হেক্টর। ফলে, চাহিদার তুলনায় আলুবীজের বরাদ্দ অত্যন্ত কম।
চলতি বিতরণ বর্ষে, বিএডিসির রংপুর অঞ্চলে আলুবীজের মোট বরাদ্দ ২ হাজার ৭৯৭.৩২ টন। এর মধ্যে নিবন্ধিত ডিলারদের জন্য ২ হাজার ২৬১.৬০০ টন, আগাম আলু চাষের জন্য ২৮২.৫৬০ টন এবং কৃষক ও বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৫২.৮৭২ টন। এই বীজ ৮১৮ জন নিবন্ধিত ডিলারের মাধ্যমে পাঁচ জেলায় বিতরণ করা হচ্ছে।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ মৌসুমে ১ লাখ ৬০৩ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল এবং চলতি মৌসুমে চাষের জমি আরও বেড়েছে। পাঁচ জেলায় আলুবীজের সম্ভাব্য চাহিদা ১ লাখ ৬৭ হাজার টন নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএডিসির আলুবীজ মানসম্পন্ন হলেও উৎপাদন বৃদ্ধি না হওয়ায় সংকট তীব্রতর হচ্ছে।
বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানিও আলুবীজ সরবরাহ করে থাকে এবং অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগে বীজ আলু সংরক্ষণ করেন। তবে, বিএডিসি যদি তাদের বীজের মান ধরে রেখে সুষ্ঠু নীতিমালা বাস্তবায়ন করে, তাহলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার বিরাহীম আইএপিপি কৃষক সমবায় সমিতি ২০১৯ সালে প্রায় দুই হাজার টন আলু রপ্তানি করেছিল। তবে, মানসম্পন্ন বীজের অভাবের কারণে তারা চাহিদামতো রপ্তানি করতে পারছে না। প্রতি একরে আলু চাষের জন্য প্রায় ৮০০ কেজি বীজ প্রয়োজন।
বিএডিসি রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক জানিয়েছেন, আলুবীজের বরাদ্দ ঢাকা অফিসে নির্ধারণ করা হয় এবং তারা শুধু নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছে। তবে তারা ৩ হাজার ২০০ টন বীজের চাহিদার জন্য আবেদন করেছিল। আগাম আলুবীজ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে এবং সাধারণ মৌসুমের জন্য ১ নভেম্বরের মধ্যে উত্তোলন ও বিতরণ শেষ হবে।
আলুবীজের সংকট কৃষকদের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং দেশীয় বাজার, সংশ্লিষ্ট শিল্প এবং রপ্তানি ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়বে। সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।