আব্দুল গণি

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫৬ পিএম

আব্দুল গণি: একাধিক ব্যক্তি ও প্রেক্ষাপট

"আব্দুল গণি" নামটি একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত হওয়ায়, স্পষ্টতার জন্য, এই নিবন্ধে আমরা তাদের পৃথকভাবে আলোচনা করব। নিচে উল্লেখিত আব্দুল গণিদের তথ্য তুলে ধরা হল:

১. নওয়াব খাজা আব্দুল গণি (১৮১৩-১৮৯৬): ঢাকার একজন প্রভাবশালী জমিদার, দাতা ও সমাজসেবী। তিনি ৩০ জুলাই ১৮১৩ সালে (১৫ শ্রাবণ, ১২২০ বাংলা) ঢাকার বেগম বাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খাজা আলীমুল্লাহ ছিলেন একাধারে ব্যবসায়ী ও ভূস্বামী। কৈশোরে আরবি-ফারসি শিক্ষা লাভ করেন। উর্দু ছিল তাঁর মাতৃভাষা। বাংলা ও ইংরেজিতেও দক্ষ ছিলেন। ১৮৪৬ সালে ওয়াকফনামা করে পিতার সম্পত্তির মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত হন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। তিনি পিতার সম্পত্তি বৃদ্ধি করেন এবং ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পূর্ব বাংলার অত্যন্ত ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ সরকারকে সহযোগিতা করেন, তবে বিদ্রোহীদের শাস্তি হ্রাসের চেষ্টাও করেন। ১৮৬১ সালে অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হন। সালিশি বিচারে অসাধারণ দক্ষতা দেখান। ১৮৬৬ সালে বাংলার ব্যবস্থাপক সভার, এবং ১৮৬৭ সালে বড়লাটের আইন সভার সদস্য মনোনীত হন। ১৮৬৯ সালে ঢাকার শিয়া-সুন্নি দাঙ্গা সালিশির মাধ্যমে মীমাংসা করেন। ঢাকার পঞ্চায়েত প্রথার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৮৭১ সালে সি.আই.ই এবং ১৮৭৫ সালে নওয়াব উপাধি লাভ করেন। ১৮৭৭ সালে নওয়াব উপাধি বংশগত হয়। ১৮৮৬ সালে কে.সি.এস.আই এবং ১৮৯২ সালে নওয়াব বাহাদুর উপাধি পান। দীর্ঘদিন ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির সদস্য ছিলেন। ১৮৬৬ সালে লঙ্গরখানা ও আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করেন। ঢাকা শহরে পানির কল স্থাপনে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা ব্যয় করেন। শিক্ষা প্রসারে ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও বরিশালে প্রচুর অর্থ দান করেন। ১৮৬৩ সালে কুমারটুলিতে একটি উচ্চ বিদ্যালয় (পরে নওয়াব সলিমুল্লাহ কলেজ) প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা মাদ্রাসা (বর্তমান কবি নজরুল কলেজ) প্রতিষ্ঠায় ৫ হাজার টাকা দিয়ে ভূমি ক্রয় করেন। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দুর্ভিক্ষ, বন্যা, যুদ্ধাহতদের জন্য ব্যাপক দান করেন। কবিতা ও গানের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। নাট্যমঞ্চে নারী অভিনয়ের সমর্থক ছিলেন। ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র 'ঢাকা নিউজ'-এর একজন স্বত্বাধিকারী ছিলেন। আহসান মঞ্জিল প্রাসাদ নির্মাণ করেন। শাহবাগ, দিলখুশা, কোম্পানি বাগান প্রভৃতি স্থাপন করেন। ২৪ আগস্ট ১৮৯৬ সালে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে মৃত্যুবরণ করেন।

২. গণি খান (১৯১৪-১৯৯৬): পাকিস্তানি পশতু ভাষার কবি, শিল্পী, লেখক, রাজনীতিবিদ এবং দার্শনিক। তিনি খান আব্দুল গফ্ফার খানের পুত্র ও খান আব্দুল ওয়ালি খানের বড় ভাই। ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে বা পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। শান্তিনিকেতনে শিল্পকলা অধ্যয়ন করেন। ইংল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষালাভ করেন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হন। কারাগারে কবিতা লেখা শুরু করেন। পাখতো সাহিত্য ও চিত্রশিল্পে অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে সিতারা-ই-ইমতিয়াজ পুরস্কার লাভ করেন। ১৫ মার্চ ১৯৯৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

৩. মো. আব্দুল গণি (জন্ম: ১৯২৮ - মৃত্যু: ৩১ মার্চ ২০০২): বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য বীর প্রতীক খেতাব লাভ করেন। নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ইপিআরে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে সিলেট ইপিআর হেডকোয়ার্টারে কর্মরত অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। জৈন্তাপুর, হরিপুর, রাধানগর, জাফলং, গোয়াইনঘাটে যুদ্ধ করেন।

৪. আব্দুল গণি (কক্সবাজার): কক্সবাজার জেলার রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সাংসদ। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হন। টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯২৬ সালে জন্মগ্রহণ করে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

৫. আব্দুল গণি (রাজবাড়ী): রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাসিন্দা। গুলশান-২ এর একটি হোটেলে কাজ করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৯ জুলাই ২০২৩ সালে গুলিতে নিহত হন।

আব্দুল গণি (স্পষ্টীকরণ)

নওয়াব খাজা আব্দুল গণি: ঢাকার প্রভাবশালী জমিদার, দাতা ও সমাজসেবী।

গণি খান: পাকিস্তানি পশতু ভাষার কবি, শিল্পী ও রাজনীতিবিদ।

মো. আব্দুল গণি: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা।

আব্দুল গণি (কক্সবাজার): কক্সবাজারের রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য।

আব্দুল গণি (রাজবাড়ী): ছাত্র আন্দোলনে নিহত।

এই নিবন্ধটি "আব্দুল গণি" নামের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে, যাতে তাদের মধ্যে স্পষ্টীকরণ করা যায়।

ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি, জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ

খাজা আলীমুল্লাহ, খান আব্দুল গফ্ফার খান, খান আব্দুল ওয়ালি খান, আহমেদউল্যা বেপারী, হাজেরা খাতুন, জাহানারা বেগম, মুশফিকা বেগম, মজিদ শেখ, আলামিন শেখ, লাকী আক্তার

ঢাকা, বেগম বাজার, কুমারটুলি, টাঙ্গাইল, মক্কা, কলকাতা, আহসান মঞ্জিল, শাহবাগ, দিলখুশা, কোম্পানি বাগান, হাথনগর, খাইবার পাখতুনখোয়া, চরসাদা, উটমানজাই, নোয়াখালী, সোনাইমুড়ি, সিলেট, জৈন্তাপুর, হরিপুর, রাধানগর, জাফলং, গোয়াইনঘাট, তামাবিল, কক্সবাজার, টেকনাফ, রাজবাড়ী, গুলশান, বাড্ডা

আব্দুল গণি, জমিদার, দাতা, সমাজসেবী, কবি, শিল্পী, লেখক, রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, সংসদ সদস্য, ছাত্র আন্দোলন

মূল তথ্যাবলী:

  • নওয়াব খাজা আব্দুল গণি: ঢাকার প্রভাবশালী জমিদার, দাতা ও সমাজসেবী।
  • গণি খান: পাকিস্তানি পশতু ভাষার কবি, শিল্পী ও রাজনীতিবিদ।
  • মো. আব্দুল গণি: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা।
  • আব্দুল গণি (কক্সবাজার): কক্সবাজারের রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য।
  • আব্দুল গণি (রাজবাড়ী): ছাত্র আন্দোলনে নিহত।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।