বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসে বিরাজমান আন্তঃক্যাডার বৈষম্য একটি দীর্ঘদিনের জটিল সমস্যা। ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারকে কেন্দ্র করেই মূলত এই বৈষম্যের প্রকটতা দেখা যায়। পদোন্নতি, গ্রেড-১ পদ, বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা, গাড়ি ঋণ, বিদেশ ভ্রমণ – এসব ক্ষেত্রেই প্রশাসন ক্যাডার অন্যান্য ক্যাডারের তুলনায় অনেক এগিয়ে।
বিভিন্ন সরকারের আমলেই প্রশাসন ক্যাডারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রবণতা ছিল, যার ফলে এই বৈষম্য দিন দিন বেড়েছে। বর্তমান সরকার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করে এই বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করে। কিন্তু কমিশনের কিছু সিদ্ধান্ত, যেমন উপসচিব পদে কোটা ব্যবস্থা বজায় রাখার প্রস্তাব, নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে এবং অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ গঠন করে বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে কলম বিরতি, মানববন্ধন এবং ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। তাদের দাবি হলো সকল ক্যাডারের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা, ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি, কৃত্য-পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় গঠন এবং উপসচিব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান কাজ নয়। তাদের প্রধান দায়িত্ব হলো জনসেবা উন্নয়ন ও সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা এবং সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। তবে, এই বিতর্ক সিভিল সার্ভিসে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান বৈষম্যের প্রকট প্রমাণ এবং তার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে।