আনোয়ারা বেগম: বাংলা চলচ্চিত্রের এক অম্লান অভিনেত্রী
আনোয়ারা বেগম, বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের এক আইকনিক মুখ। ১৯৪৮ সালের ১৭ জানুয়ারী কুমিল্লার দাউদকান্দিতে জন্মগ্রহণকারী এই অভিনেত্রী প্রায় ছয় দশক ধরে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনে অবিরাম অবদান রেখেছেন। তার অভিনয় জীবন শুধুমাত্র নৃত্যশিল্পী হিসেবে শুরু হলেও, ধীরে ধীরে তিনি একজন প্রতিভাবান অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার অভিনীত ছবির সংখ্যা ছয়শ' ছাড়িয়ে গেছে, এবং অসংখ্য মঞ্চনাটক ও টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করেছেন।
আনোয়ারার চলচ্চিত্র জীবনের শুরুটা হয় ষাটের দশকে। ১৪-১৫ বছর বয়সে অভিনেতা আজিমের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রে পা রাখেন। তার প্রথম কাজ ছিল ফজলুল হকের ‘আজান’ (পরে ‘উত্তরণ’) চলচ্চিত্রে নৃত্যশিল্পী হিসেবে। ওস্তাদ দেব কুমারের কাছে নাচ শেখা এই অভিনেত্রী পরবর্তীতে আবদুল জব্বার খান পরিচালিত ‘নাচঘর’ (১৯৬৩) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এরপর ‘প্রীত না জানে রীত’ (১৯৬৩) সহ বেশ কিছু উর্দু ও বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৬৪ সালে জহির রায়হানের ‘সংগম’ চলচ্চিত্রে সহ-অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেন।
১৯৬৭ সালে ‘বালা’ চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর তার চলচ্চিত্র জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হয় ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রে আলেয়া চরিত্রে তার অভিনয় তাকে জনপ্রিয়তার শিখরে নিয়ে যায়। এই চলচ্চিত্রটি তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তান জুড়ে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে।
আনোয়ারা ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ (১৯৭৮), ‘সুন্দরী’ (১৯৭৯), ‘দেবদাস’ (১৯৮২), ‘সখিনার যুদ্ধ’ (১৯৮৪), ‘শুভদা’ (১৯৮৬), ‘মরণের পরে’ (১৯৯০), ‘রাধা কৃষ্ণ’ (১৯৯২), ‘বাংলার বধূ’ (১৯৯৩) এবং ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪) সহ অনেক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি মোট আটটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন, এছাড়াও ২০২০ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।
১৯৭২ সালে মুহিতুল ইসলাম মুহিতের সাথে তার বিবাহ হয়। তাদের একমাত্র সন্তান মুক্তি, যিনি নিজেও একজন অভিনেত্রী। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত থাকা আনোয়ারা বেগম বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অম্লান স্মৃতি হিসেবে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবেন।