বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অপরাধ একটি জটিল ও বহুমুখী সমস্যা। এর সাথে জড়িত থাকে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন। অর্থনৈতিক অপরাধের প্রকৃতি বিচিত্র, এর মধ্যে রয়েছে হুন্ডি-হাওলা, অর্থ পাচার, কর ফাঁকি, দুর্নীতি, ব্যাংকিং কেলেঙ্কারি, জালিয়াতি, এবং অন্যান্য অবৈধ আর্থিক লেনদেন।
হুন্ডি-হাওলা: বাংলাদেশে হুন্ডি-হাওলা একটি ব্যাপক সমস্যা। অনুমান করা হয় যে, বছরে ৩০-৩৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি লেনদেন এই অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে হয়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং আন্তর্জাতিক পণ্য বাণিজ্য এই অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়, ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত (বিশেষ করে দুবাই), মালয়েশিয়া, কেইমান আইল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস হুন্ডি মাধ্যমে অর্থ পাচারের প্রধান গন্তব্য।
অর্থ পাচার: অর্থনৈতিক অপরাধের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো অর্থ পাচার। দুর্নীতি, অবৈধ ব্যবসা এবং অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়। এই অর্থ পাচারের ফলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পায়।
কর ফাঁকি: কর ফাঁকি অর্থনৈতিক অপরাধের একটি প্রধান অংশ। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে কর প্রদান এড়িয়ে চলে। এর ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয় এবং সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচীতে প্রভাব পড়ে।
দুর্নীতি: দুর্নীতি অর্থনৈতিক অপরাধের মূলে অবস্থান করে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির প্রসার অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করে, বৈষম্য বৃদ্ধি করে এবং উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টি করে। বেক্সিমকো গ্রুপের মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের উপর ব্যাংক রিসিভার নিয়োগের ঘটনা দুর্নীতির প্রমাণ।
ব্যাংকিং কেলেঙ্কারি: ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা অর্থনৈতিক অপরাধের বড় একটি কারণ। এসব কেলেঙ্কারির ফলে ব্যাংকের অর্থ লুণ্ঠিত হয় এবং দেশের অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
অপরাধের প্রতিকার: অর্থনৈতিক অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে কঠোর আইন প্রয়োগ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতার সংস্কৃতি গঠন, জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধি করা অত্যাবশ্যক।