হুমায়ুন ফরীদী

আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২:৪৩ পিএম

হুমায়ূন ফরীদী: অভিনয়ের এক অমিত্র প্রতিভা

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন জগতের অন্যতম কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদী (২৯ মে ১৯৫২ - ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২) একজন অসাধারণ অভিনেতা ছিলেন যিনি মঞ্চ, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন। তাঁর অভিনয় কৌশল, রসবোধ, এবং চরিত্র ফুটিয়ে তোলার দক্ষতা তাকে সবার কাছে আলাদা করে তুলে ধরে।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:

ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণকারী হুমায়ূন ফরীদীর প্রকৃত নাম হুমায়ূন কামরুল ইসলাম। কালীগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি মাদারীপুর ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে যথাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব রসায়ন বিভাগে ভর্তি হলেও, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে পড়াশোনা অসম্পূর্ণ রেখে যান। পরবর্তীতে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

নাট্যজীবনের সূচনা:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল দীনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ১৯৭৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য উৎসবে তিনি প্রধান সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হিসেবে 'শকুন্তলা', 'ফণীমনসা', 'কীর্তনখোলা', 'কেরামত মঙ্গল' সহ অনেক মঞ্চ নাটকে অভিনয় করে তিনি দর্শকদের মনে স্থান করে নেন।

টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয়:

১৯৮০-এর দশকে টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের শুরু হয় হুমায়ূন ফরীদীর। ‘নিখোঁজ সংবাদ’ নাটকের মাধ্যমে অভিনয় জীবনে আত্মপ্রকাশের পর 'নীল নকশার সন্ধানে', 'দূরবীন দিয়ে দেখুন', 'ভাঙ্গনের শব্দ শুনি', 'সংশপ্তক' (এতে কান কাটা রমজান চরিত্রে অভিনয় অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করে), 'কোথাও কেউ নেই', 'সমুদ্রে গাঙচিল', 'ভবের হাট' সহ আরো অনেক নাটকে অভিনয় করে তিনি দর্শকদের মনে গেঁথে যান।

চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ১৯৮৫ সালে 'দহন' ছবির মাধ্যমে। 'সন্ত্রাস', 'বীরপুরুষ', 'দিনমজুর', 'লড়াকু', 'বিশ্বপ্রেমিক', 'মাতৃত্ব', 'জয়যাত্রা', 'শ্যামল ছায়া', 'আহা!' প্রভৃতি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। 'মাতৃত্ব' ছবিতে অভিনয়ের জন্য ২০০৪ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

ব্যক্তিগত জীবন:

হুমায়ূন ফরীদী দু'বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথম স্ত্রী নাজমুন আরা বেগম মিনু, যার সাথে তার এক কন্যা শারারাত ইসলাম দেবযানী রয়েছে। পরে অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে বিয়ে করলেও ২০০৮ সালে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে।

মৃত্যু:

২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে হুমায়ূন ফরীদীর মৃত্যু হয়।

সম্মাননা:

২০১৮ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।

উত্তরাধিকার:

হুমায়ূন ফরীদী তার অভিনয়ের দক্ষতা এবং ব্যক্তিত্বের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার অভিনীত চরিত্রগুলি, বিশেষ করে 'সংশপ্তক' নাটকে 'কান কাটা রমজান' চরিত্রটি, বাংলাদেশী দর্শকদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • হুমায়ূন ফরীদী ছিলেন বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তি অভিনেতা।
  • তিনি মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন।
  • তিনি 'মাতৃত্ব' ছবিতে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
  • ২০১৮ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
  • তার অভিনীত 'সংশপ্তক' নাটকের 'কান কাটা রমজান' চরিত্রটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - হুমায়ুন ফরীদী

২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:০০ এএম

বৈশাখী টেলিভিশনের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।

২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:০০ এএম

বৈশাখী টেলিভিশনের ২০তম বার্ষিকীতে অভিনয় করবেন।