ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী নেতারা: এক সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ
ইয়েমেনের রাজনৈতিক অস্থিরতায় হুথি নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই আন্দোলন, যার আনুষ্ঠানিক নাম ‘আনসারুল্লাহ’ (আল্লাহর সমর্থক), ১৯৯০-এর দশকে উত্তর ইয়েমেনের সাদা শহরে উদ্ভব হয়। এরা মূলত জাইদি শিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, তাদের নেতৃত্ব হুসেইন আল-হুথি (যিনি ২০০৪ সালে নিহত হন) ও তার ভাই আব্দুল মালিক আল-হুথির নেতৃত্বে গঠিত।
হুথি নেতারা প্রাথমিকভাবে ইয়েমেনের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আলী আবদুল্লাহ সালেহের শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। সালেহের দুর্নীতি ও সৌদি আরব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ এনে তারা প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করে। ২০০৩ সালে লেবাননের হিজবুল্লাহ’র প্রভাব গ্রহণ করে হুথিরা তাদের স্লোগানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও ইহুদিদের বিরোধিতা ব্যক্ত করে।
২০১১ সালের ইয়েমেনি বিপ্লবের সময় রাস্তার বিক্ষোভে অংশ নিয়ে অন্যান্য বিরোধী দলগুলির সাথে সমন্বয় করে হুথি নেতারা। তারা জাতীয় সংলাপ সম্মেলনেও অংশ নেয়, কিন্তু ২০১১ সালের জিসিসি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে। ২০১৪ সালের শেষের দিকে, তারা আলি আবদুল্লাহ সালেহের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে রাজধানী সানা দখল করে নেয়। এর ফলে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক হস্তক্ষেপ শুরু হয় এবং ইয়েমেনে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হয়।
হুথি নেতারা ইয়েমেনে অর্থনৈতিক অনুন্নয়ন ও জাইদি শিয়া সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। তারা দেশের জাইদি-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলির জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করে। তবে তাদের কর্মকাণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে অসামরিক লোকজনকে লক্ষ্যবস্তু করা ও শিশু সৈন্যদের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।
সম্প্রতি হুথি নেতারা গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেছে। হুথি নেতারা বলেছে যে তাদের লক্ষ্য হল ফিলিস্তিনীদের প্রতি সমর্থন প্রদর্শন এবং গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ নিশ্চিত করা।
হুথি নেতারা (ইয়েমেন)
• হুথি আন্দোলন ১৯৯০-এর দশকে ইয়েমেনে উদ্ভূত হয়।
• জাইদি শিয়া সম্প্রদায়ের প্রধানত তাদের সমর্থন।
• হুসেইন আল-হুথি (নিহত) ও আব্দুল মালিক আল-হুথি নেতৃত্ব।
• আলি আবদুল্লাহ সালেহর বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ।
• ২০১৪ সালে সানা দখল ও গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত।
• মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ।
• গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলা।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী নেতাদের উত্থান, তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং গাজা যুদ্ধে তাদের ভূমিকা নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ।
আনসারুল্লাহ (হুথি আন্দোলন), হিজবুল্লাহ
হুসেইন আল-হুথি, আব্দুল মালিক আল-হুথি, আলী আবদুল্লাহ সালেহ, আব্দেল-রাব্বু মানসুর হাদি
সাদা (ইয়েমেন), সানা (ইয়েমেন), লোহিত সাগর, গাজা
হুথি, ইয়েমেন, গৃহযুদ্ধ, জাইদি শিয়া, আনসারুল্লাহ, আলী আবদুল্লাহ সালেহ, সৌদি আরব, ইরান, গাজা যুদ্ধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন