লন্ডন হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ইংরেজি: London Heathrow Airport), যা ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত লন্ডন বিমানবন্দর নামে পরিচিত ছিল, ইংল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। লন্ডনের ছয়টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মধ্যে এটিই বৃহত্তম। হিথ্রো বিমানবন্দর হোল্ডিংসের মালিকানাধীন ও পরিচালিত এই বিমানবন্দরটি যাত্রী পরিবহনের দিক থেকে বিশ্বের চতুর্থ এবং আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিবহনের দিক থেকে দ্বিতীয় ব্যস্ততম। ইউরোপে এটি সর্বাধিক ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
১৯৩০ সালে একটি ছোট বিমানক্ষেত্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে হিথ্রো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এর ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। লন্ডনের কেন্দ্রীয় অংশ থেকে ২৩ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এই বিমানবন্দরটি ৪.৭৪ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। দুটি সমান্তরাল পূর্ব-পশ্চিম রানওয়ে, চারটি যাত্রী টার্মিনাল এবং একটি কার্গো টার্মিনাল রয়েছে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং ভার্জিন আটলান্টিক এয়ারওয়েজ এই বিমানবন্দরটিকে প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে।
বিমানবন্দরটি লন্ডন বরো অফ হিলিংডনের অন্তর্গত। এর আশেপাশে সিপসন, হারলিংটন, হারমন্ডসওয়ার্থ, লংফোর্ড, ক্র্যানফোর্ড, হ্যাটন, ফেলথাম, বেডফন্ট, স্ট্যানওয়েল, স্লাউ, হর্টন ও উইন্ডসরের মতো এলাকা অবস্থিত। হেস এবং হারলিংটন সংসদীয় এলাকার মধ্যে অবস্থিত হিথ্রোর রানওয়ে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত।
১৯৪৬ সালের ২৫শে মার্চ লন্ডন বিমানবন্দর নামে উদ্বোধন করা হয়। ১৯৬৬ সালের সেপ্টেম্বরে এর নামকরণ করা হয় হিথ্রো বিমানবন্দর। স্যার ফ্রেডরিক গিব্বার্ড এর নকশা অনুযায়ী বিমানবন্দরের টার্মিনাল ও ভবন নির্মিত হয়। ৮৯ টির বেশি এয়ারলাইন্স ৮৪ টি দেশের ২০০ টির বেশি গন্তব্যে লন্ডন হিথ্রো থেকে যাত্রী পরিবহন করে। ২০২১ সালে ১৯.৪ মিলিয়ন যাত্রী সেবা প্রদান করা হয়, যার মধ্যে ১৭ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক ও ২.৪ মিলিয়ন দেশীয় যাত্রী ছিল। ২০২২ সালে প্রায় ১৪ লাখ টন মালবাহী পরিবহন করা হয়।
বিভিন্ন সময়ে হিথ্রোর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ২০০৮ সালে উদ্বোধিত টার্মিনাল ৫, ২০১৪ সালে টার্মিনাল ২ এবং ২০১৫ সালে টার্মিনাল ১ বন্ধ হয়। এছাড়াও, ২০২০ সালে COVID-19 মহামারীর সময় বিমানবন্দরের সেবা ব্যাপকভাবে কমে যায়। একাধিকবার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করা হলেও নানা কারণে বেশিরভাগই বাতিল হয়। তবে, তৃতীয় রানওয়ের নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে।
হিথ্রো বিমানবন্দরে বিভিন্ন ধর্মের জন্য প্রার্থনা কক্ষ এবং পরামর্শ কক্ষ রয়েছে। বিমানবন্দরের প্রেস কর্পস রয়েছে। এর অভ্যন্তরীণ সড়কের নাম সাধারণত কোড দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন- হিথ্রো এক্সপ্রেস, পিকাডিলী লাইন, বাস ও ট্যাক্সি। হিথ্রো বিমানবন্দর আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।