বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত হাওর অঞ্চলগুলি দেশের ঐতিহ্য, জীববৈচিত্র্য ও অর্থনীতির সাথে গভীরভাবে জড়িত। এই নিবন্ধে হাওর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, বিশেষ করে হাকালুকি হাওর ও টাঙ্গুয়ার হাওর কে কেন্দ্র করে।
হাওরের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য: হাওর হলো পিরিচাকৃতির বৃহৎ ভূ-গাঠনিক অবনমন, যা বর্ষাকালে পানির আধিক্যে প্লাবিত হয় এবং শীতকালে আংশিক শুষ্ক হয়। এগুলি সাধারণত নদী ও খালের জলপ্রবাহের উপর নির্ভরশীল। বৃহত্তর সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে হাওরের প্রাধান্য দেখা যায়। শীতকালে হাওরের বিশাল প্রান্তর দেখতে মনোমুগ্ধকর, আর বর্ষাকালে এটি কুলহীন সমুদ্রের আকার ধারণ করে। হাওর শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ ‘সাগর’-এর বিকৃত রূপ বলে ধারণা করা হয়।
হাকালুকি হাওর: বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর হলো হাকালুকি হাওর। এর আয়তন প্রায় ১৮,১১৫ হেক্টর, যার মধ্যে বিলের আয়তন ৪,৪০০ হেক্টর। এটি মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার পাঁচটি উপজেলায় বিস্তৃত (বড়লেখা, কুলাউড়া, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার)। উত্তরে মেঘালয় পাহাড় ও পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হাকালুকি হাওরে প্রতিবছর বন্যা হয়। এখানে ২৭৩টি ছোট, বড় ও মাঝারি বিল রয়েছে। শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের আগমনে হাওরের সৌন্দর্য্য বেড়ে যায়। এটি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।
টাঙ্গুয়ার হাওর: সুনামগঞ্জ জেলার টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই হাওরটি স্থানীয়দের কাছে ‘নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল’ নামেও পরিচিত। এটি মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এবং সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলায় বিস্তৃত। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরনা এসে মিশেছে এই হাওরে। টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার স্থান।
হাওরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব: হাওর অঞ্চলের অর্থনীতি প্রধানত মৎস্যচাষ, চাষাবাদ ও পশুপালনের উপর নির্ভরশীল। বর্ষার পর হাওরের শুষ্ক ভূমিতে ধান চাষ হয়। গবাদিপশু পালনের ‘বাথান’ ব্যবস্থা এখানে একটি প্রচলিত প্রথা।
হাওরের ভবিষ্যৎ: অতিরিক্ত জনসংখ্যা, মাটি ভরাট, বোরো চাষের সম্প্রসারণ ও বন ধ্বংসের ফলে হাওরগুলির ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে। টেকসই ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে হাওরের ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা জরুরী।