হবিগঞ্জ সদর উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়
সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত হবিগঞ্জ সদর উপজেলা, ঐতিহাসিক গৌরব ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ একটি অঞ্চল। প্রায় ২৫৩.৭৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি উত্তরে বানিয়াচং ও নবীগঞ্জ, দক্ষিণে চুনারুঘাট ও মাধবপুর, পূর্বে বাহুবল এবং পশ্চিমে লাখাই উপজেলার সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত। খোয়াই নদীর তীরে অবস্থিত এই উপজেলার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ২৬৩,৬৯৫ জন।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
হবিগঞ্জের নামকরণের পেছনে রয়েছে এক রোমাঞ্চকর ইতিহাস। সৈয়দ হবিব উল্লাহ খোয়াই নদীর তীরে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে হবিগঞ্জ নামে পরিচিতি লাভ করে। ঐতিহাসিক সুলতানশী হাবেলিও এই উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘হবিগঞ্জ থানা ও বিদ্যুৎ ভবন’ যুদ্ধ উপজেলার ইতিহাসে এক অম্লান স্মৃতি হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
অর্থনীতি:
এই উপজেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, আখ, আলু, পাট ইত্যাদি প্রধান কৃষি ফসল। তবে কৃষির পাশাপাশি ব্যবসা, পরিবহন, চাকরি ইত্যাদিও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
শিক্ষার দিক থেকে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। এখানে বেশ কয়েকটি কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার জন্য হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ইত্যাদি রয়েছে।
দর্শনীয় স্থান:
ঐতিহাসিক সুলতানশী হাবেলি, খোয়াই নদী, রত্না বিল, ঘাড়ভাঙ্গা বিল, কুকি বিল, এই সকল স্থান পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়। এছাড়াও উচাইল শংকরপাশা মসজিদ (১৫১৩ খ্রি.) ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:
সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা দেশের অন্যান্য অংশের সাথে যুক্ত। তবে, এক সময় চলাচলকারী হবিগঞ্জ বাজার-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে, যা স্থানীয়দের জন্য একটি বড় দুঃখের বিষয়।
সারসংক্ষেপে, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এবং উন্নয়নের এক মনোরম মিশ্রণ। এই উপজেলার আরও উন্নয়নের মাধ্যমে এর সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও সমৃদ্ধ হবে এবং জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।