হকি: এক অতীতের গৌরব, এক বর্তমানের আশা
হকি, এক অপূর্ব ক্রীড়া, যার ইতিহাসের সূত্রপাত প্রাচীন গ্রিসে। তিন হাজার বছর আগের মিশরীয় পিরামিডেও এর চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়। ইউরোপের ১১২২ খ্রিস্টাব্দের দেয়াল চিত্রেও হকির সাক্ষ্য মেলে। তবে আধুনিক হকির রূপ নেয় ইংল্যান্ডে। ১৮৮৩ সালে লন্ডনের উইম্বলডন হকি ক্লাবের প্রতিষ্ঠা এর নিয়মকানুন সুসংগঠিত করে। ১৮৯৫ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে ইংল্যান্ড আয়ারল্যান্ডকে পরাজিত করে। ১৯০৮ সালে হকি অলিম্পিকের অংশ হয়, আর ১৯৪২ সালে ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল দ্য হকি গঠিত হয়। ১৯৫৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপের আয়োজন হয়। পাকিস্তান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, হল্যান্ড, ইংল্যান্ড, কোরিয়া, মালয়েশিয়া হকিতে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ।
বাংলাদেশে হকির আগমন ব্রিটিশ আমলে। ১৯০৫ সালে নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহর পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় এর সূচনা হয়, যদিও প্রাথমিকভাবে এটি সীমাবদ্ধ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘হকির যাদুকর’ ধ্যান চাঁদের ঢাকায় প্রদর্শনী ম্যাচ হকির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে। ১৯৪৭ সালের বিভাজন হকির বিকাশে বাধার সৃষ্টি করে। ১৯৬৯ সালে ঢাকা পাকিস্তান ন্যাশনাল হকি চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আয়োজন করে। ১৯৭০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের ঢাকা সফর স্মরণীয় ঘটনা।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন গঠিত হয়, যা ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক ও ১৯৭৫ সালে এশিয়ান হকি ফেডারেশনের সদস্য হয়। দেশে নিয়মিত হকি লীগ, টুর্নামেন্ট, জাতীয় যুব ও সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা সিনিয়র ডিভিশন হকি লীগ, জাতীয় হকি লীগ, স্বাধীনতা দিবস হকি টুর্নামেন্ট উল্লেখযোগ্য। ২০০৩ সাল থেকে ডেভেলপমেন্ট কাপ নিয়মিত হয়। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অভিষেক জুনিয়র ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ডে। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৮ সালে নির্মিত মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম বর্তমানে কৃত্রিম টার্ফে সজ্জিত।
হকি, বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আগামী দিনে এর আরও বিকাশের জন্য পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন।