স্থানীয় সরকার: বাংলাদেশের গ্রামীণ ও নগর উন্নয়নের ভিত্তি
বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা দীর্ঘ ইতিহাসের অধিকারী। প্রাচীনকাল থেকেই গ্রামীণ সমাজে পঞ্চায়েত প্রথা, মৌজা, পরগণা ইত্যাদির মাধ্যমে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। মুঘল আমলে রাজস্ব সংগ্রহ ও প্রশাসনের জন্য সরকার/চাকলা ও পরগণার উত্থান ঘটে। ঔপনিবেশিক আমলে জমিদারি প্রথা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্রিটিশরা স্থানীয় শাসন ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে লর্ড রিপনের আমলে লোকাল সেলফ গভর্নমেন্ট অ্যাক্ট ১৮৮৫ এর মাধ্যমে তিনস্তরের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা (জেলা বোর্ড, স্থানীয় বোর্ড, ইউনিয়ন কমিটি) প্রবর্তিত হয়।
পাকিস্তান আমলে মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ (১৯৫৯) দ্বারা ইউনিয়ন, থানা, জেলা ও বিভাগীয় কাউন্সিল গঠিত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ৭ নং আদেশ দ্বারা পূর্ববর্তী কাঠামো ভেঙে দেয়া হয় এবং ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা বোর্ড (পরবর্তীতে জেলা পরিষদ) গঠিত হয়। এরশাদ সরকারের আমলে উপজেলাকে প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হয়। উপজেলা পরিষদ গঠনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে তিন স্তরের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান: ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং জেলা পরিষদ। এছাড়াও রয়েছে পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন। প্রতিটি স্তরের কার্যাবলী সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবে, সরকারি অনুদানের উপর নির্ভরতা, দুর্নীতি এবং জনগণের সচেতনতার অভাব ইত্যাদি কিছু চ্যালেঞ্জ এখনও বিদ্যমান।